ফতওয়া বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
মোবাইল: 01856-618367
ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com
পেইজলিংক: Facebook. com/Darul-ifta-Jamia-Patiya
তাহারাত-পবিত্রতা
সমস্যা: মুহতারাম, বিনীত নিবেদন এই যে, আমি ৩৭ বছর বয়সী একজন মহিলা। বিগত তিন বছর আগে অপারেশনের মাধ্যমে আমার জরায়ু ফেলে দেওয়া হয়। তবে ডিম্বাশয় দুটি বহাল রাখা হয়। তাই প্রতি মাসে তিন দিন যাবৎ হায়জের মতো কিছু ময়লা দেখা দেয়। ডাক্তার বলেছে, আমার মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর (তথা ৫৫ বছর বয়সের পর) এই সমস্যার সমাধান হবে। অতএব আমার জানার বিষয় হলো, প্রতি মাসের ওই দিনগুলোতে আমি নামায-রোযা ইত্যাদি আদায় করতে পারবো কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আবিদা জান্নাত
পঞ্চবটা, নারায়ণগঞ্জ
সমাধান: অপারেশনের মাধ্যমে আপনার জরায়ু ফলে দেওয়ার পরও যদি প্রতিমাসে ঋতুস্রাব তিন দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে, তখন এগুলোও শরয়ীত মতে হায়েজ (মাসকি স্রাব) হিসেবে গণ্য হবে এবং এই তনিদনি আপনি নামায-রোযা ইত্যাদি আদায় করতে পারবনে না। তবে যদি আপনার ঋতুস্রাব তিন দিন থেকে কম হয় তাহলে তা হায়েজ (মাসকি স্রাব) হিসেবে গণ্য হবে না। তখন নামায-রোযা ইত্যাদি আদায় করতে পারবনে। সুনানে দারেমি: ৮৭১, মুআত্তা মালেক: ১৫০, কুদুরী: পৃ. ১৯
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, ওযু করার সময় টুথপেস্ট বা ব্রাশ ব্যবহার করার দ্বারা মিসওয়াকের সুন্নাত আদায় হবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. কাছেম
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: মিসওয়াকের মধ্যে দুটি বিষয়। এক. দাঁত পরিষ্কার করা। দুই. মিসওয়াক ব্যবহার করা। যদি মিসওয়াক না থাকে তাহলে ব্রাশ বা টুথপেস্ট ব্যবহার করলে তা দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করার যে সুন্নাত রয়েছে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে মিসওয়াক থাকা অবস্থায় ব্রাশ ব্যবহার করলে প্রায় সকল ফকীহের মতে মিসওয়াক ব্যবহার করার সুন্নাত আদায় হবে না। কেননা প্রত্যেক নামায বা ওযুর শুরুতে মিসওয়াক করা সুন্নাত। অথচ সকল ডাক্তার এ ব্যপারে একমত যে, একদিনে দুইবারের অধিক দাঁত ব্রাশ করলে দাঁত নষ্ট হয়ে যায়। অথচ মিসওয়াক দৈনিক যতবারই করুক না কেন দাঁতের কোন ক্ষতি হয় না। বরং দাঁত আরও মজবুত হয়। উমদাতু করী: ২/৬৯২, বাহরুর রায়েক: ১/২১, ফতওয়ায়ে শামী: ১/২৩৬
সমস্যা: মুহতারাম, বিনীত নিবেদন এই যে, কোনো ব্যক্তির ওপর গোসল ফরজ হওয়ার পর গোসল না করে ওই অবস্থায় দীনী কোনো বিষয় ওয়াজ নসীহত করা জায়েয আছে কি? বিশেষ করে নসীহতের ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীস পাঠ করতে পারবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. কামাল
কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম
সমাধান: যদি কোন ব্যক্তির ওপর গোসল ফরজ হয়। তাহলে সে ব্যক্তির জন্য ওই অবস্থায় ওয়াজ-নসীহত করা জায়েয হবে। তবে জমহুর ফুকহায়ে কেরামের মতে সে ব্যক্তির জন্য ওয়াজ ও নসীহতের মধ্যে কুরআনের আয়াত পড়া জায়েয হবে না। চাই কম হোক কিংবা বেশি হোক। তবে কোন কোন ফকীহের মতে দুআ ও শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য এক আয়াতের থেকে কম পড়া জায়েয হবে। সুরা আল-মায়িদা: ৬, সুনানে তিরমিযী: ১/১৩১, বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৪৭
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদর এই যে, যদি কোন ব্যক্তি কূপের পানিতে পড়ে মারা যায়। তখন সে পানির হুকুম কী হবে? এবং তা প্রবিত্র করার পদ্ধতি কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. নেজাম উদ্দীন
মুগদা, ঢাকা
সমাধান: যদি কোন ব্যক্তি কূপের মধ্যে পড়ে মারা যায়। তখন ওই কূপের পানি নাপাক হয়ে যাবে। কূপের পানি প্রবিত্র করার পদ্ধতি হলো, ওই কূপের সব পানি বের করে ফেলতে হবে। চাই ওই ব্যক্তি ফুলে বা ফেটে যাক কিংবা না যাক। আর যদি সব পানি বের করা সম্ভব না হয়, তখন দুইজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির মত অনুসারে ওই কূপ থেকে সে পরিমাণ পানি বের করে নেবে। ই’লাউস সুনান: ১/২৮৫, ফতওয়ায়ে কাজীখান: ১/০৭, বাহরুর রায়েক: ১/১১৯
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, যদি কোন মহিলার তিনদিন হায়েজ (স্রাব) দেখা দেওয়ার পর স্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং চারদিন পর পুণরায় ঋতুস্রাব শুরু হয়ে তিনদিন অব্যহত থাকে। তাহলে উক্ত মহিলার কয়দিন হায়েজ এসেছে বলে গণ্য হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. বদিউল আলম
পেকুয়া, কক্সবাজার
সমাধান: প্রশ্নোক্ত ব্যপারে যদিও ইমাম আবু হানিফা (রহ.) থেকে বিভিন্ন রেওয়াত (বর্ণনা) পাওয়া যায়। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহ ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মতকে গ্রহণ করেছেন। কেননা তা সহজ। সেটি হলো দুই স্রাবের মাঝে যদি ১৫ দিন পবিত্র পাওয়া না যায়। তাহলে ওই পবিত্রতা গ্রহণযোগ্য নয়। বরং পুরোটাই স্রাব হিসাবে গণ্য হবে। তাই কোন মহিলার যদি তিনদিন হায়েজ দেখা দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় এবং চারদিন পর পুনরায় ঋতুস্রাব শুরু হয়ে তিনদিন অব্যহত থাকে এবং উক্ত মহিলার জীবনে যদি প্রথমবার হায়েজ এসে থাকে বা তার ঋতুস্রাবের নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা না থেকে থাকে তাহলে প্রথম দশদিন হায়েজ বলে গণ্য হবে। আর যদি ওই মহিলার ঋতুস্রাবের নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা থাকে, তাহলে তারও ওই দশদিন হায়েয হিসাবে গণ্য হবে এবং তার হায়েজের অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে গণ্য করা হবে। তবে উক্ত মহিলার স্রাব দেখা দেওয়া যদি মোট দশদিন অতিক্রম করে তাহলে তার নির্দিষ্ট দিনগুলো হায়েয হয়ে বাকি দিনগুলো ইস্তেহাযা (রোগজনিত রক্ত) হিসাবে গণ্য হবে। ফতওয়ায়ে শামী: ১/৪৮৩, বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৬৫
সমস্যা: মুহতারাম, নিবেদন এই যে, কোন ব্যক্তির শরীরে ইঞ্জেকশন পুশ করে রক্ত বের করার পর ওই স্থান থেকে যদি রক্ত গড়িয়ে না পড়ে তার ওযু ভঙ্গ হবে কি?
মাও. আবুল কালাম
সরফভাটা, রাঙ্গুনিয়া
সমাধান: শরীরে ইঞ্জেকশন পুশ করে রক্ত যদি এতো অল্প পরিমাণ বের করা হয় যা স্বাভাবিকভাবে বের হলে গড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে না, তাহলে ওযু ভঙ্গ হবে না। আর যদি রক্তের পরিমাণ এতো বেশি হয় যা স্বাভাবিকভাবে গড়িয়ে পড়বে, তাহলে ওযু ভেঙে যাবে। চাই ইঞ্জেকশনের স্থান থেকে পরে রক্ত বের হোক বা না হোক। বাযলুল মাজহুদ: ২/৯৪, কাজীখান: ১/৩৮, ফতহুল কদীর: ১/৩৪
সমস্যা: চামড়ার মৌজা যদি এমন পাতলা হয়, যা দিয়ে জুতাবিহীন কয়েক মাইল হাঁটা যায় না। তখন ঐ সমস্ত মৌজার ওপর মাসেহ করা জায়েয হবে কি? বিশেষ করে বর্তমানে কিছু মৌজা আছে যা ১ নম্বর চামড়া দিয়ে তৈরি হয় না। সেগুলো পায়ে দিয়ে পাকা রাস্তার ওপর হাঁটলে মৌজার নিচের তলা সহজে ক্ষয় হয়ে যায়। এরকম সাধারণ মৌজার ওপর মাসেহ করা জায়েয হবে কি?
মু. সাঈদ মাহমুদ
আমিরাবাদ, লোহাগাড়া
সমাধান: শরীয়তে চামড়ার মৌজার ওপর মাসেহ বৈধ হওয়ার জন্য ৩ মাইল লাগাতার চলতে পারার যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা শুধু মৌজা দিয়ে জুতা বিহীন চলতে পারার কথা বলা হয়েছে।
অতএব যেসব মৌজা এরকম পাতলা হয় যা দিয়ে জুতাবিহীন ৩ মাইল লাগাতার চলা সম্ভব, তাহলে সে সমস্ত মৌজার ওপর মাসেহ করা জায়েয হবে। অন্যথায় জায়েয হবে না।
আর সাথে সাথে চলার রাস্তাটা খুব শক্তও হবে না, যে রকম বর্তমানের পাকা রাস্তা আবার একেবারে কাঁদা রাস্তার মতো নরমও হবে না। সুতরাং বর্তমানে যেসব ২ নম্বর চামড়ার মৌজা আছে তা দিয়ে যদি স্বাভাবিক মাটির রাস্তায় লাগাতার ৩ মাইল জুতা বিহীন শুধু মৌজা পায়ে দিয়ে হাঁটলে মৌজা ক্ষয় হয়ে যায় না এবং সেরকম মৌজাগুলো যদি পানিও না চুষে তাহলে সে সমস্ত মৌজার ওপর মাসেহ করা জায়েয হবে। অন্যথায় জায়েয হবে না। ফতওয়ায়ে কাজীখান: ১/৪৬, ফতওয়ায়ে শামী: ১/৪৪১, বাহরুর রায়েক: ১/১৮৩
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, আমরা জানি নাবালেগ ছেলে-মেয়ের ওপর ওযু বা গোসল ফরজ হয়না। সে হিসাবে ছেলে-মেয়েদেরকে কখন থেকে বালেগ হিসাবে গণ্য করা হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবিন।
মু. শওকত আলী
চট্টগ্রাম
সমাধান: শরীয়তে বালক-বালিকার ওপর নামায-রোযা, ওযু-গোসল ইত্যাদি ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে বালেগ হওয়াকে মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে কোন বালক-বালিকা বালেগ হওয়ার পূর্বে তার ওপর শরীয়তের কোন বিধি-বিধান ফরয নয়। এরই ভিত্তিতে ফুকহায়ে কেরাম বালেগের সময়-সীমা নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেন, বালক-বালিকার যখন ঘুম অথবা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাত হবে এবং বালিকার যখন ঋতুস্রাব শুরু হবে বা গর্ভবতী হয়ে যাবে তখন তাকে বালেগ হিসাবে গণ্য করা হবে। আর যদি এই সমস্ত আলামত প্রকাশ না পায় তাহলে তার বালেগ হওয়ার মাপকাঠি বয়স হিসাবে নির্ধারণ করা হবে। তবে এই বয়সের স্তর নির্ধারণ করতে গিয়ে ফুকহায়ে কেরাম বিভিন্নজন বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। আর আমাদের হানাফী মাযহাবের বিশুদ্ধ মত হলো, বালক-বালিকার যদি চন্দ্রমাস হিসাবে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পরও উপযুক্ত আলামত প্রকাশ না পায়, তাহলে তাকে বালেগ হিসাবে গণ্য করা হবে এবং শরীয়তের সমস্ত হুকুম-আহকাম তার ওপর ফরয হয়ে যাবে।
ফুকাহায়ে কেরাম আরও বলেছেন যে, ছেলে সর্বনিম্ন ১২ বছর এবং মেয়ে ৯ বছরের পরে বালেগ হতে পারে। তবে এর আগে বালেগ হওয়ার দাবি করলেও তা গ্রহণ করা যাবে না। আর এই মতের ওপরই আমাদের মাযহাবের ফতওয়া। ইবনে কসীর: ১/৬৫৫, উমদাতুল করী: ৯/৫৩৪, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ৫/৬১
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, শরীফ একজন ধার্মিক ব্যক্তি। তার শরীরে বা কাপড়ে এক দেরহামের চতুর্থাংশ থেকে কম নাপাকি থাকা অবস্থায় নামায আদায় করার পরে জানতে পারল তার শরীরে বা কাপড়ে নাপাকি ছিল। আমার জানার বিষয় হলো, তার আদায়কৃত নামায শুদ্ধ হয়েছে কি-না? এবং সে নাপাকি দূর করার পদ্ধতি কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. রেজাউল করিম
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
সমাধান: আদায়কৃত নামায শুদ্ধ হয়েছে। কারণ তার শরীর বা কাপড়ের নাপাকি এক দেরহাম থেকে কম ছিল। আর ফতওয়ার সকল গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নাপাকি যদি এক দেরহাম থেকে কম হয়, তাহলে তা ক্ষমাযোগ্য। তবে অল্প নাপাকিও শরীর বা কাপড়ে থাকা উচিত নয়। তাই ধৌত করলে পরিপূর্ণ পবিত্র হয়ে যাবে। সুরা আল-মুদ্দাসসির: ৪, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৯৮, বাহরুর রায়েক: ১/২২৮
সালাত
সমাধান: সম্মানিত মুহতারাম, বিনিত নিবেদন এই যে, আমরা জানি নামাযে হাত বাঁধা প্রয়োজন, আমার জানার বিষয় হলো, আমাদের হানাফী মাযহাব অনুযায়ী পুরুষদের জন্য কোন জায়গায় হাত বাঁধা প্রয়োজন? তা বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. সালমান
কক্সবাজার
সমাধান: আমাদের হানাফী মাযহাব মতে নামাযের মধ্যে হাত বাঁধা সুন্নাত। আর হানাফী মাযহাব অনুসারী পুরুষদের জন্য ডান হাতের তালুকে বাম হাতের পিঠের ওপর রেখে নাভির নিচে হাত বাঁধা সুন্নাত। যা হানাফী মাযহাবের সকল গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি নাভির নিচে হাত না বেঁধে নাভির ওপর বা সিনার ওপর হাত বাঁধে তাহলে তার নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। ই’লাউস সুনান: ২/১৯২, দুরুল মুখতার: ১/৭৩, ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ৯/৩১৭
সমস্যা: মুহতারাম, যথাবিহীত নিবেদন এই যে, ওযু করে আদায়কৃত নামায ফাসেদ প্রমাণিত হলে, তায়াম্মুম অবস্থায় তা কযা করা যাবে কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
সমাধান: আমাদের হানাফী মাযহাবমতে ওযু করে আদায়কৃত নামায ফাসেদ প্রমাণিত হলে তায়াম্মুম অবস্থায় সে নামাযকে কযা করা জায়েয হবে। কারণ ওযু দ্বারা যেসব নামায আদায় করা যায়, তায়াম্মুম দ্বারাও সে সমস্ত নামায আদায় করা যায়। সুরা আল-মায়েদা: ৬, ই’লাউস সুনান: ১/৩২৮, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৮৩
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, নামাযের মধ্যে সতরের প্রত্যেক অঙ্গের কী পরিমাণ খোলা থাকলে নামায ভঙ্গ হয়ে যায়? সে হিসাবে একজন নারীর নামাযের ক্ষেত্রে নামাযের সতরের অঙ্গগুলোকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং তা কী কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
খালেদা বেগম
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
সমাধান: শরীয়তে নারী-পুরুষের যেসব অঙ্গকে নামাযের সতর হিসাবে গণ্য করা হয়েছে এর মধ্যে থেকে কোন একটি অঙ্গ বা একাধিক অঙ্গ মিলে এক-চতুর্থাংশ নামাযের মধ্যে এক রুকুন তথা তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় যদি খোলা থাকে, তাহলে তার নামায ভেঙে যাবে। তবে এক-চতুর্থাংশের কম অঙ্গ যদি অধিক সময় বা অধিকাংশ অঙ্গ অল্প সময় খোলা থাকে, তাহলে তার নামাযে কোন ঘাটতি আসবে না। সে ক্ষেত্রে ফুকহায়ে কেরাম মহিলাদের পুরো শরীরকে ২৪ অঙ্গে বিভক্ত করেছেন।
যথাক্রমে১, ২. দুই হাঁটু সহ দুই রান ৩, ৪. দুই পাছা ৫. লজ্জাস্থান ৬. নিতম্ব ৭. পেট ৮. পিঠ ৯, ১০. দু’পায়ের গোছাসহ দুই নলা ১১, ১২. দুই স্তন ১৩, ১৪. দ্ইু কান ১৫, ১৬. দুই কনুইসহ দুই বাহু ১৭, ১৮. দুই কব্জিসহ দুই হাত ১৯, ২০. দুই হাতের পিঠ ২১. সিনা ২২. গলা ২৩. মাথা ২৪. চুল। এগুলো সব আলাদা আলাদা একেকটি অঙ্গ। প্রত্যেকটির মধ্যে উপরোক্ত হুকুম আরোপিত হবে। ফতওয়ায়ে কাজীখান: ৭/৮৪৮, ফতহুল কদীর: ১/৩১৮, ফতওয়ায়ে আলমগীরী: ১/১১৬
সমাধান: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, আমরা জানি নামাযে নিয়ত করা ফরজ। এই নিয়তকে মুখে উচ্চারণ করে বলার হুকুম কী? বিশেষ করে অনেকে বলে থাকে আরবিতে মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। এই ব্যপারে তাহকীকী মত পেশ করে বাধিত করবেন।
মাসরুর
চকরিয়া, কক্সবাজার
সমাধান: অন্তরে নামাযের নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা ফরজ নয়। এ ব্যপারে রাসূল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে কোন আমল পাওয়া যায়নি। কারণ সে যুগে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজনীয়তা ছিল না। তবে পরবর্তিতে মানুষের দুনিয়ার প্রীতি ও কর্ম ব্যস্ততার কারণে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করার ব্যপারের্ ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মত পোষণ করেন। কারো মতে মুস্তাহাব। অন্য কারো মতে বেদআত। তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো, মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা সেই ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব যে ব্যক্তি নামাযের নিয়তকে অন্তরের মধ্যে উপস্থিত করতে পারে না, বা যে ব্যক্তি অধিকাংশ সময় নিয়তকে নির্ধারণ করতে ভুলে যায়। ফতহুল কদীর: ১/২৩২, বাহরুর রায়েক: ১/২৭৭, মিরকাতুল মাফাতীহ: ১/৯৪
সমস্যা: মুহতারাম, যথাবিহীত নিবেদন এই যে, আমার জানার বিষয় হলো, যদি কোন ব্যক্তি একই নমাযে একাধিক ভুল করে, যেমন প্রথম রাকাতে সুরা আল-ফাতেহার পর সুরা মিলায়নি। দ্বিতীয় বৈঠক করেনি এবং তৃতীয় রাকাতে ভুলবশত তাশাহুদও পড়েনি। একই নামাযে এতগুলো ভুল করলে তার নামায পুণরায় পড়তে হবে কি? বা এ ক্ষেত্রে করণীয় কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. হারুন
রাউজান, চট্টগ্রাম
সমাধান: কোন ব্যক্তি একই নামাযে একাধিক ভুল করলে অর্থাৎ ভুলবশত একাধিক ওয়াজিব ছুটে গেলে শুধুমাত্র একবার সিজদায়ে সহু আদায় করলে যথেষ্ট হবে। নামায পুণরায় আদায় করতে হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির যেহেতু কয়েকটি ওয়াজিব ভুলবশত ছুটে গেছে, তাই তার জন্য নামায শেষে একবার সিজদায়ে সহু আদায় করা যতেষ্ট হবে। বাহরুর রায়েক: ২/৯২, বাদায়েউস সানায়ে: ১/৫৪৬, ফতওয়ায়ে শামী: ২/৫৪৩
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, প্লেনে সফর অবস্থায় নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলে নামায আদায়ের পদ্ধতি কী হবে? বিশেষ করে এক্ষেত্রে কেবলা নির্ধারনের হুকুম ও পদ্ধতি জানিয়ে বাধিত করবেন।
আহমদ আলী
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: প্লেন নবআবিষ্কৃত হওয়ার দরুণ পূর্ববর্তী ফুকহায়ে কেরামের কিতাবে এই জাতীয় মাসায়েল পাওয়া দুষ্কর। তবে পরবর্তী ফুকহায়ে কেরাম চলমান স্টিমার ও লঞ্চের সাথে তুলনা করে প্লেনে ফরজ নামাযও বৈধ হওয়ার মত ব্যক্ত করেছেন। তবে কেবলামুখিতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ প্লেনের মোড় পরিবর্তন হয়ে গেলে মুসল্লিকে কেবলার দিকে ঘুরে যেতে হবে এবং নামায আপন গতিতে চলতে থাকবে। কেবলা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিমান কর্তৃপক্ষ থেকে জেনে নেবে। অথবা বিমানের স্ক্রিনে দেওয়া মানচিত্র ও প্লেনের দিক নির্ধারণ করে কেবলা ঠিক করতে হবে। অন্যথায় تحري করতে হবে। বাদায়েউস সানায়ে: ১/২৯১, ফতহুল কদীর: ১/২৬২, ফতওয়ায়ে শামী: ১/১০১
সমস্যা: মুহতারাম, বিনিত নিবেদন এই যে, বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সেজদা অবস্থায় দুআ করলে সেই দুআ বেশি কবুল হয়। সে হিসেবে ফরজ কিংবা নফল নামাযে যে কোন ধরণের দুআ করা যাবে কি? বিশেষ করে যারা আরবি পারে না, তারা বাংলা ভাষায় যে কোন ধরণের দুআ করতে পারবে কি-না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
মু. নেজাম উদ্দীন
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
সমাধান: বিভিন্ন হাদীসের মধ্যে সেজদা অবস্থায় দুআ করার যে উৎসাহ বাণী বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কথা ফুকহায়ে কেরাম স্পষ্ট করে বলেছেন এবং দুআগুলো নফল নামাযের ক্ষেত্রেও কুরআন-হাদীস থেকে বাছাইকৃত বা তৎসমর্থিত হওয়াকে আবশ্যক বলেছেন। আরবি ভাষা ছাড়া ভিন্ন ভাষায় দুআ করাকে ফুকহায়ে কেরাম নামাযের ক্ষেত্রে মাকরুহে তাহরীমি এবং নামাযের বাহিরে মাকরুহে তানযীহি বলেছেন। তাই যারা আরবি পারে না তারা নামাযে সেজদা অবস্থায় শুধুমাত্র তাসবীহ পাঠ করবে। অন্য দুআ করবে না। আর নামাযের বাহিরে নিজ ভাষায় দুআ করলে যথেষ্ট হবে। সহীহ মুসলিম: ১/১৯১, ফতহুল কদীর: ১/২৭৮, এমদাদুল ফতওয়া: ১/৪১৪
বিয়ে-তালাক
সমস্যা: সবিনয় নিবেদন এই যে, কাবিননামার ১৮ নম্বর ধারার শর্ত-মূলে স্ত্রী তার স্বামীকে ডাক যোগে তালাকনামা পাঠানোর পর স্বামী যদি তা গ্রহণ না করে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাক পতিত হবে কি?
মাসুদুল আলম
সাতকানিয়া
সমাধান: প্রশ্নে উল্লিখিত স্বামী তার স্ত্রীকে বিয়ে করার সময় কাবিননামার ১৮ নং কলামে শর্তসাপেক্ষ যে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করেছে, সে অনুযায়ী স্ত্রী যখন লিখিত তালাকনামার মাধ্যমে তিন তালাক গ্রহণ করে বিবাহ-বিচ্ছেদ করেছে, যাকে শরীয়তে ‘তাফবীজ তালাক বা তালাকের ক্ষমতা অর্পণ’ বলা হয়। স্ত্রীর উক্ত তালাকনামা দ্বারা স্বামীর পক্ষ থেকে তিন তালাক পতিত হয়ে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। স্ত্রী তালাক গ্রহণের পর থেকে তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘর-সংসার করা সম্পূণ হারাম ও নাজায়েয। এক্ষেত্রে স্বামী তালাকনামা গ্রহণ করুক বা না করুক সর্বাবস্থায় তালাক হয়ে যাবে এবং তালাকের সাধারণ ইদ্দত তিন হায়েজ, তথা তিন মাসিক স্রাব পরিমাণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বিশুদ্ধভাবে শরয়ী হালালা ব্যতীত তাদের পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সুরা আল-বাকারা: ২৩০, সহীহ আল-বুখারী: ২/৭৯১, ফতওয়ায়ে শামী: ৪/৫৫২
সমস্যা: সম্মানিত মুফতি সাহেবগণ, বিগত ৩ অক্টোবর ২০২০ তারিখে দোকান বন্ধ করে রাত প্রায় সাড়ে দশটার দিকে আমি বাড়িতে আসি। বাড়িতে এসে স্ত্রীকে খাবার আনতে বলি। এরপর একটি বিষয় নিয়ে আমাদের উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সে চলে যাওয়ার কথা বলে, পরে আমি তাকে তার বোনের বাসায় দিয়ে আসি। এরপর বাড়ির সবাই তাকে নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে আমি বলি, আমি তাকে আনব না। একদিন আমি রাগ করে আমার বোন, বোনজামাই এবং শাশুড়িকে ফোন করে বলি, যদি সে এক সপ্তাহের মধ্যে না আসে, তাহলে আমি তাকে তালাকনামা পাঠিয়ে দেব। এর পর সে চলে আসে। আসার পর একদিন সে আমাকে বলে ‘আমি এক সপ্তাহের জন্য এসেছি। আপনি তালাক দিয়ে দিলে আমি চলে যাব’, তালাক না দিলে আত্মহত্যা করবো। এর পর আমিও বলে ফেলি ‘তিন তালাক’। এরপর সে চুপ হয়ে যায় এবং আমিও চুপ হয়ে যাই। আমি আমার মা ও আমার শাশুড়িকে বলি, আমি ওকে ‘তালাক’ দিয়েছি। আমাদের দুইজনের মাথায় বেশি রাগ, রাগের কারণে এসব কিছু হল। এখন আমারা উভয়ে অনুতপ্ত এবং বিষয়টার সঠিক সমাধান চাই।
আবদুল্লাহ
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
সমাধান: স্মরণ রাখতে হবে যে, স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামীর সাধারণ রাগ স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হওয়ার মধ্যে বাধা হয় না। কেননা আমাদের দেশে প্রায় তালাক স্বামীর সাধারণ চরম রাগের কারণেই দেওয়া হয়। সুতরাং স্বামী রাগের মাথায় স্ত্রীকে এক শব্দে যে তিন তালাক দিয়েছে, উক্ত তিন তালাক স্ত্রীর ওপর পতিত হয়ে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাক হওয়ার পর থেকে তাদের স্বামী স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করা পরিষ্কার হারাম ও নাজায়েয।
উল্লেখ্য যে, স্বামী এক শব্দে বা এক সাথে স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে স্ত্রীর ওপর তিন তালাকই পতিত হওয়ার ব্যাপারে কুরআন হাদীসের অকাট্য দলিল এবং আমাদের চার ইমামের ইজমা ও ইমাম বুখারীর ঐকমত্য রয়েছে। সুরা আল-বাকারা: ২৩০, সহীহ আল-বুখারী: ২/৭৯১, ফতওয়ায়ে শামী: ৪/৫৫২
সমস্যা: জনাব! সবিনয় অবগত করছি যে, আমি সজ্ঞানে জবানবন্দি পেশ করছি যে, আমি আমার স্ত্রীকে বিয়ে করেছি তিন বছর পূর্বে। কয়েকদিন যাবৎ আমার মন মেজাজ খারাপ ছিলো। একদিন হঠাৎ আমাদের মাঝে ঝগড়া হয়। তখন আমার স্ত্রী আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে লাগলে আমি বললাম, তুমি আমার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করছো কেন? এর মধ্যেই স্ত্রী আমাকে বলে, তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। তখন আমি রাগানি¦ত হয়ে ‘তিন তালাক’ ব্যবহার করেছি। অতএব মহোদয়ের কাছে জানতে চাই, আমার উক্ত তালাক প্রদান করার দ্বারা তালাক পতিত হয়েছে কি-না? (স্ত্রীর জবানবন্দি) আমার স্বামী রাতে নেশা করে ঘরে আসে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আমি তাকে বললাম যে আপনি তো আমার সাথে শপথ করে বলেছিলেন, ‘আমি আর নেশা করবো না’। এটা বলতে না বলতেই আমাদের মাঝে ঝগড়া বাধে। অতঃপর স্বামী আমাকে তিন তালাক প্রদান করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন স্বামীর মা, বোন এবং আমাদের দু’বছরের মেয়েটিও ছিলো।
আবদুর রহমান
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
সমাধান: আমাদের তাহকীক (পর্যালোচনা) মতে প্রশ্নে উল্লেখিত ঘটনায় স্বামী তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া-বিবাদের একপর্যায়ে এক সাথে যে তিন তালাক দিয়েছে, উক্ত তিন তালাক স্ত্রীর ওপর পতিত হয়ে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। তালাক হওয়ার পর থেকে তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করা পষ্কিার হারাম ও নাজায়েয এবং তালাকের সাধারণ ইদ্দত তিন হায়েজ, তথা তিন মাসিক স্রাব সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বিশুদ্ধভাবে শরয়ী হালালা ব্যতীত তাদের পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। উল্লেখ্য যে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামীর সাধারণ চরম রাগ স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হওয়ার মধ্যে বাধা হয় না। কেননা আমাদের দেশে প্রায় তালাক স্বামীর চরম রাগের কারণেই দেওয়া হয়। নতুবা কোন তালাক পতিত হবে না।
অবশ্য রাগের এমন চরম অবস্থা, যখন রাগান্বিত ব্যক্তি مدهوش তথা এক রকম পাগলের মতো আবোল-তাবোল কথা বলে বা তার কাজ-কর্মেও ব্যতিক্রম দেখা দেয়, তখন তাকে مدهوش তথা একরকম পাগলের সাথে তুলনা করে সেই অবস্থায় তার দেওয়া তালাক পতিত না হওয়ার কথা আমাদের ফতওয়ার কিতাবাদিতে লেখা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নে উল্লেখিত বর্ণনামতে স্বামীর এইরকম কোন অবস্থা ছিলো না। তাই তালাক হয়ে যাবে। সুরা আল-বাকারা: ২৩০, সহীহ আল-বুখারী: ২/৭৯১, ফতওয়ায়ে শামী: ৪/৫৫২
সমস্যা: মুহতারাম, সবিনয় নিবেদন এই যে, আমার সাথে আমার আব্বার কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আব্বা বললেন, তোর বউ ‘পোষ্কারা’ (দুর্ভাগিণী)। তখন আমার রাগ এসে যায়। রাগের মাথায় স্ত্রীকে বলি-এক তালাক, দুই তালাক, আবদুল আজিজের ঝি (মেয়ে) তিন তালাক। আমার স্ত্রী গর্ভিতা। স্ত্রীর সাথে সংসার করার কোন পথ আছে কি-না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
বেলালুদ্দীন
টেকনাফ, কক্সবাজার
সমাধান: স্বামী বেলালুদ্দীন যখন রাগের মাথায় স্ত্রীকে সম্বোধন করে প্রথমে এক তালাক, দুই তালাক, দেওয়ার পর এক শব্দে তিন তালাক প্রদান করেছে। তার দ্বারা স্ত্রীর ওপর তিন তালাক পতিত হয়ে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। অতিরিক্ত তালাকগুলো বৃথা হয়েছে। তিন তালাক দেওয়ার পর থেকে তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘর-সংসার করা পরিষ্কার হারাম ও নাজায়েয। যেহেতু তালাক দেওয়ার সময় স্ত্রী গর্ভিতা হওয়ার কথা বলা হয়েছে সেহেতু তালাকের ইদ্দত হবে গর্ভ প্রসব। গর্ভ প্রসব করার পর অন্য পুরুষের মাধ্যমে বিশুদ্ধভাবে হালালা ব্যতিত তাদের পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
ব্যবসায়-বাণিজ্য
- যদি কোন ব্যক্তি স্বর্ণের পরিবর্তে টাকা লাগায়। যেমন জসিম উদ্দিন এক লক্ষ টাকা আবদুল্লাহকে এই শর্তের ওপর দিলো যে, দশ মাস পর জসিমকে উক্ত এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে চুয়ান্ন হাজার টাকা মূল্যের আড়াই ভরি স্বর্ণ দিতে হবে।
- যদি কোন ব্যক্তি চাউলের পরিবতে টাকা লাগায়। যেমন মাহবুব চল্লিশ হাজার টাকা মুসলিমকে এই শর্তের ওপর দিলো যে, উক্ত চল্লিশ হাজার টাকার বিনিময়ে চার মাস পর মাহবুবকে আঠারো শত টাকা দামের সাতাশ বস্তা চাউল দিতে হবে। উক্ত ব্যবসা সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কী?
- (বি. দ্র.) উক্ত শর্ত মোতাবেক যে সময় ধার্য করা হয়েছে তা পূর্ণ হওয়ার পর স্বর্ণ বা চাউল না নিয়ে তার মূল্য পরিমাণ টাকা নেওয়া যাবে কি-না? যদি উক্ত টাকা নিয়ে নতুন আরেক লেনদেনে ব্যবহার করতে চাই তখন তার হুকুম কী হবে?
বিস্তারিত বিধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
মাঈনুদ্দীন
টেকনাফ, কক্সবাজার
সমাধান: ১. টাকা ও স্বর্ণ এক জিনিস নয়। তাই তা কম-বেশি এবং নগদ বাকি বিনিয়োগ করা জায়েয ও বৈধ হবে। তবে তার মধ্যে ‘চুয়ান্ন হাজার টাকা মূল্যের’, যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে, সেই শর্ত শরীয়ত মতে ফাসেদ শর্ত হিসেবে গণ্য হবে। কারণ উক্ত দশ মাসের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে স্বর্ণের দাম কম-বেশি হওয়ার খুবই সম্ভাবনা আছে। কেননা সাধারণত স্বর্ণের দাম প্রায় সময় উঠানামা করে। তাই চুয়ান্ন হাজার টাকা মূল্যের শর্ত বাদ দিতে হবে। তা না হলে উক্ত বিনিয়োগ শরীয়তমতে ফাসেদ ও নাজায়েয হবে। আর বিনিয়োগের সময় স্বর্ণের মানও নির্ধারণ করতে হবে। যাতে পরবর্তীতে ঝগড়া বিবাদের আশংকা না থাকে।
২. উক্ত বিনিয়োগকে শরীয়তের মধ্যে ‘বাইয়ে সালম’ বলা হয়। যা সহীহ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যথা ১. সাতাশ বস্তা চাউলের পরিমাণ নির্দিষ্ট হওয়া। ২. চাউলের মান তথা: কোয়ালিটি নির্দিষ্ট হওয়া। ৩. চাউল পরিশোধের স্থান নির্ধারিত হওয়া এবং তার মেয়াদ নির্দিষ্ট হওয়া ইত্যাদি। এসব শর্ত পাওয়া গেলে প্রশ্নে বর্ণিত ব্যবসা জায়েয ও বৈধ হবে। উক্ত বিনিয়োগের মধ্যে ‘১৮ শত টাকা দামের’ যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে উক্ত শর্তও সহীহ হবে না। বরং এটা শর্তে ফাসেদ হিসাবে গণ্য হবে। যার দ্বারা উক্ত বিনিয়োগ-পদ্ধতি সহীহ হবে না। কেননা এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে চাউলের দাম কম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. উক্ত বিনিয়োগ জায়েয হবে না। বরং যে জিনিসের ওপর বিনিয়োগ করা হয়েছে সেই জিনিসই দিতে হবে। তার পরিবর্তে টাকা দিলে সুদ ও হারাম হবে এবং সেই টাকা নিয়ে অন্য বিনিয়োগে ব্যবহার করাও নাজায়েয। সহীহ মুসলিম: ২/৩১ বাহরুর রায়েক: ৭/৪৩৪ তাতারখানিয়া: ৯/৪৪৭
তরকা-মিরাস
সমস্যা: জনাব, যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আরজ এই যে, আমি মুহাম্মদ ইসলাম, কক্সবাজার জেলাধীন খুরুশকুলের একজন অধিবাসী। আমাদের কোন ছেলে সন্তান নেই। কেবল ছয়জন কন্যা সন্তান রয়েছে। তবে আমার কয়েকজন ভাই-বোন রয়েছে। আমাদের (পিতা-মাতার) মৃত্যর পর সন্তান হিসেবে মেয়েরাই আমাদের ওয়ারিশ। আমরা মা-বাবা উভয়ের ইচ্ছা হলো, আামাদের যাবতীয় সম্পদ জীবদ্দশায় আমরা ভোগ করবো, আমাদের মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়েরাই আমাদের সম্পদগুলো ভোগ করবে। উক্ত আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে আমরা সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এমতাবস্থায় আমাদের জানার বিষয় হলো, আমাদের গৃহীত উক্ত সিদ্ধান্ত শরীয়তসম্মত কি-না? যদি শরীয়তসম্মত না হয় তাহলে এরকম কোন পন্থা আছে কি যে পন্থা অবলম্বনে আমাদের মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়েরাই আমাদের সম্পদ ভোগ করবে? অনুগ্রহপূর্বক সমাধান প্রদান করে উপকৃত করবেন।
মুহাম্মদ ইসলাম
খুরুশকুল, কক্সবাজার
সমাধান: প্রশ্নে উল্লেখিত ঘটনায় আপনারা এরকম করলে আল্লাহ তায়ালার নিকট গুনাগার হবেন, জান্নাতের মিরাস থেকেও বঞ্চিত হবেন। অবশ্যই কিছু সম্পদ আপনাদের মেয়েদের নামে আপনাদের জীবদ্দশায় দানপত্র করে তাদের ভোগদখলে দিয়ে দিতে পারবেন। আর কিছু সম্পদ দানপত্র না করে উন্মুক্ত রাখতে হবে, যাতে আপনাদের ভাই-বোনেরা মিরাসের অংশ পায়। সুনানে ইবনে মাজাহ: ২/১৯৪ সুনানে তিরমিযী: ২/৩২, সুনানে আবু দাউদ: ১/৩৯৬