دَارُ الافتاء
جامعہ اسلاميہ پٹیہ، چاٹگام
সমস্যা ও সমাধান
ফতওয়া বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
মোবাইল: ০১৮৫৬-৬১৮৩৬৭
ইমেইল: daruliftapatiya@gmail. com
পেইজলিংক: Facebook. com/Darul-ifta-Jamia-Patiya
আকায়েদ
সমস্যা: আমরা সকল মুসলমান জানি এবং বিশ্বাস করি যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। তাঁর পর কোনো নতুন নবীর আগমন ঘটবে না। ওলামায়ে কেরাম বিষয়টিকে খতমে নুবুওয়াত বলে উল্লেখ করে থাকেন এবং একথাও বলেন যে, এটি দীনের অপরিহার্য একটি আকীদা বা বিশ্বাস।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, ‘কাদিয়ানি আহমদিয়া জামায়াত’ নামে একটা গোষ্ঠী খতমে নুবুওয়াতের আকীদা অস্বীকার করে এবং তারা নিজেদেরকে (মিথ্যা নুবুওয়াতের দাবিদার) মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির অনুসারী দাবি করে।
ইসলামের স্বকীয়তা-জ্ঞাপক ‘ইসলাম, মুসলিম, মসজিদ, উম্মুল মুমিনীন, সাহাবী, কালিমা তাইয়িবা’ প্রভৃতি পরিভাষাসমূহ ব্যবহার করে নিজেদেরকে মুসলিম জামায়াত বলে প্রচার করে। ফলে তাদের এমন আচরণে সহজ-সরল সাধারণ মুসলমানগণ প্রতারিত ও বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের ঈমান ও আমল বরবাদ করছে।
এ অবস্থায় মুসলমান ভাই-বোনদের বিশুদ্ব আকীদা ও ঈমান-আমল হেফাজত করার লক্ষ্যে খতমে নুবুওয়াতের আকীদাবিষয়ক সুস্পষ্ট বিবরণ জাতির সামনে তুলে ধরে ‘কাদিয়ানি আহমদিয়া জামায়াতের’ ভ্রান্তি ও প্রতারণার বিষয়টি সকলের কাছে পরিস্কার করা অত্যন্ত জরুরি।
এ উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত কয়েকটি প্রশ্নের দলিলসহ উত্তর প্রদান করে উম্মতে মুসলিমার ঈমান-আমল সংরক্ষণে সহযোগিতা করে বাধিত করবেন।
- খতমে নুবুওয়াত সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বক্তব্য কী?
- কাদিয়ানি ধর্মবিশ্বাস ও ইসলামের মাঝে পার্থক্য কী?
- কাদিয়ানি ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কী?
- কাদিয়ানিরা ‘ইসলাম, মুসলিম, মসজিদ, উম্মুল মুমিনীন, সাহাবী, কালিমা তাইয়িবা’ প্রভৃতি পরিভাষা ব্যবহার করার অধিকার রাখে কি-না?
হাফিজ উদ্দীন
মালিবাগ, ঢাকা-১২১৯
সমাধান: হক্কানি ওলামায়ে কেরাম একথার ওপর একমত যে, কাদিয়ানি আহমদিয়া জামায়াতের মূল নায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি ইংরেজ (বিধর্মী)-দের একজন দালাল মাত্র। ইংরেজরা মুসলিম জাতির মাঝে দলাদলি ও ফেরকারাজি তৈরি করার লক্ষ্যে গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে (ভণ্ড) নবী হিসেবে তৈরি করেছে। সুতরাং সে একজন ইংরেজি নবী, সে মুসলমানদের নবী হতে পারে না। তার মতবাদ সব কুফরি মতবাদ, সে ও তার অনুসারীরা নবী করীম (সা.)-এর খতমে নুবুওয়াতকে অস্বীকার করে থাকে, যেটা সম্পুর্ণ কুফরি মতবাদ। কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট ঘোষণা মতে, নবী করীম (সা.) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী ও রাসূল। তাঁর পর কিয়ামত পর্যন্ত নতুন কোনো নবীর আগমন ঘটবে না।
উপর্যুক্ত বর্ণনার পর উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের সমাধান ক্রমানুসারে নিম্নে প্রদত্ত হল:
- কুরআন-হাদীসের পরিস্কার ঘোষণা: একমাত্র নবী করীম (সা.)-ই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। এবং নবী করীম (সা.)-এর পর কিয়ামত পর্যন্ত নতুন নবীর আগমনের আকীদা রাখা কুফরি ও ভণ্ডামি।
- কাদিয়ানি ধর্মবিশ্বাস ও ইসলামের মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। তবে মূল পার্থক্য হচ্ছে কাদিয়ানিরা নবী (সা.)-কে শেষ নবী বিশ্বাস করে না। অর্থাৎ তারা নবী (সা.) এর খতমে নুবুওয়াতকে অস্বীকার করে বরং তারা গোলাম আহমদের মত একজন ভণ্ড ও দালালকে নবী বলে বিশ্বাস করে। যা স্পষ্ট কুফরি আকীদা।
- এই প্রশ্নের উত্তর উল্লিখিত আলোচনায় এসে গেছে।
- ‘ইসলাম, মুসলিম, মসজিদ, উম্মুল মুমিনীন, সাহাবী, কালিমা তাইয়িবা’ প্রভৃতি ইসলামি পরিভাষা ব্যবহার করার অধিকার তাদের নেই। ইসলামি পরিভাষাসমূহ তারা সহজ-সরল মুসলমানদেরকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকে এবং তারা মসজিদের নামে যেসব বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে থাকে, তা ইসলামি দৃষ্টিতে মসজিদ নয়। বরং গির্জা ঘরের মতো। সেসব ঘরকে মসজিদ বলা যাবে না। [সূরা আল-আহযাব: ৩৯, তাফসীরে ইবনে কসীর: ৬/১৪৩, তাফসীরে রূহুল মাআনী: ১৩/৭৮, তাফসীরে শা’রানী: ৪১১, সহীহ আল-বুখারী: ১/৫০১, সুনানে তিরমিযী: ২২১৯ ও আল-আশবাহ ওন নাযায়ের: ২৯৬]
তাহারাত-পবিত্রতা
সমস্যা: কোন ব্যক্তির শরীরে যদি ইঞ্জেকশন পুশ করে রক্ত বের করার পর সেই স্থান থেকে রক্ত গড়িয়ে না পড়ে তার অযু ভেঙে যাবে কি না?
মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ
মোমেনশাহী
সমাধান: শরীরে ইঞ্জেকশন পুশ করে যদি রক্ত এত অল্প পরিমাণ বের করা হয়, যা স্বাভাবিকভাবে বের হলে গড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে না, তাহলে অযু ভঙ্গ হবে না।
আর যদি রক্তের পরিমাণ এত বেশি হয় যা স্বাভাবিকভাবে বের হলে গড়িয়ে পড়বে, তাহলে তার অযু ভেঙে যাবে। সে স্থান থেকে পরে রক্ত বের হোক না হোক। [খুলাসাতুল ফাতওয়া: ১৭, ফাতহুল কদীর: ১/৩৪, বাহরুর রায়িক: ১/৩৩, ফাতওয়ায়ে রহীমিয়া: ৪/২৩]
সমস্যা: আমরা জানি গোসলের সময় নাকের ভেতর পানি পৌঁছানো ফরয, এখন আমার কথা হলো, সাম্প্রতিক আমার নাকের গোস্ত বৃদ্ধির (পলিপের) কারণে নাকের ভেতর পানি পৌঁছাতে পারছি না। এখন আমার গোসলের হুকুম কী? দলীল-সহকারে জানিয়ে বাধিত করবেন।
মহিউদ্দীন
কুষ্টিয়া
সমাধান: ফুকহায়ে কেরাম বলেছেন, গোসলের সময় যেসব জায়গায় সহজে পানি পৌঁছানো যায়, সেসব জায়গায় পানি পৌঁছানো ফরয। সে হিসেবে নাকের ব্যপারেও একই হুকুম। তবে আপনার নাকের মধ্যে যেহেতু পলিপের কারণে সহজে পানি পৌঁছানো যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে শরীয়ত আপনাকে পানি পৌঁছাতে বাধ্য করবে না। সে জন্য আপনার ওপর কষ্টসাধ্য করে ভিতরাংশে পানি পৌঁছানো প্রয়োজন নয়, যথাসম্ভব পানি পোঁছালে যথেষ্ট হয়ে যাবে। [হিদায়া: ১/২৯, বাদায়িউ সানায়ি: ১/১৩৬, দুররুল মুখতার: ২৮]
সালাত-নামায
সমস্যা: নামাযের সতরের প্রত্যেক অঙ্গের কী পরিমাণ খোলা থাকলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। সে হিসেবে একজন নারীর নামাযের ক্ষেত্রে সতরের অঙ্গগুলোকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং তা কী কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুহাম্মদ হোসাইন আহমদ
টাঙ্গাইল
সমাধান: নারী-পুরুষের যেসব অঙ্গকে নামাযের সতর হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এর মধ্যে কোন একটি অঙ্গ বা একাধিক অঙ্গ মিলে একচতুর্থাংশ নামাযের মধ্যে এক রুকন তথা তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় খোলা থাকলে তার নামায ভেঙে যাবে। তবে এক চতুর্থাংশের কম অঙ্গ যদি অধিক সময় বা অধিকাংশ অঙ্গ অল্প সময় খোলা থাকে তাহলে নামায ভঙ্গ হবে না। সে ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরাম মহিলাদের পুরো শরীরকে ২৪ অঙ্গে বিভক্ত করেছেন যথাক্রমে ১.২. দুই হাঁটুসহ দুই রান, ৩.৪. দুই পাছা, ৫. লজ্জাস্থান, ৬. wbZ¤^, ৭. পেট, ৮. পিঠ, ৯.১০ দুই পায়ের গোছাসহ দুই নলা, ১১.১২ উভয় স্তন, ১৩.১৪. দুই কান, ১৫.১৬. দুই কনুইসহ দুই বাহু, ১৭.১৮. দুই কবজিসহ দুই হাত, ১৯.২০. দুই হাতের পিঠ, ২১. সিনা, ২২. গলা, ২৩. মাথা ও ২৪. চুল। এগুলো সব আলাদা-আলাদা একেকটি অঙ্গ। প্রত্যেকটির ওপর উপর্যুক্ত হুকুম আরোপিত হবে। [আহকামুল কুরআন: ৩/৪১, ই’লাউস সুনান: ২/১৬৫, আল-মুহীতুল বুরহানী: ১/৩১৮, রদ্দুল মুহতার: ২/৮৩]
সমস্যা: প্লেনে সফর অবস্থায় নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলে নামায আদায়ের পদ্ধতি কী হবে? বিশেষ করে এক্ষেত্রে কিবলা নির্ধারণের হুকুম ও পদ্ধতি জানিয়ে বাধিত করবেন।
মাওলানা আমানুল্লাহ
সৌদী প্রবাসী
সমাধান: প্লেন নবাবিষ্কৃত হওয়ার কারণে পূর্ববতী ফুকাহায়ে কেরামের কিতাবে এ জাতীয় মাসআলা পাওয়া দুষ্কর। তবে পরবর্তী ফুকাহায়ে কেরাম চলমান স্টিমার ও লঞ্চের সাথে তুলনা করে প্লেনেও ফরয নামায বৈধ হওয়ার মত ব্যক্ত করেছেন। তবে তা কিবলামুখী অবস্থায় হওয়া অনিবার্য। অর্থাৎ প্লেনের মোড় পরিবর্তন হয়ে গেলে মুসল্লিকে কিবলার দিকে ঘুরে যেতে হবে এবং নামায আপন গতিতে চলতে থাকবে। কিবলা নির্ধাণের বিষয়টা বিমান কর্তৃপক্ষ থেকে জেনে নিবে। অথবা বিমানের স্ক্রিনে দেয়া মানচিত্র দেখে ও প্লেনের দিক নির্ধারণ করে কিবলা ঠিক করে নিতে হবে। অন্যথায় তাহাররি (চিন্তা-ফিকির) করে ঠিক করবে। [ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/৫৪০, আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআ: ১/১৬৪, আহসানুল ফাতওয়া: ৪/৯০]
নিকাহ-তালাক
সমাধান: আমার বয়স যখন ৭৪/৭৫ অর্থাৎ আজ থেকে পূর্ণ পাঁচ বছর ছয় মাস আগে আমার স্ত্রী মারা যায়। এর কিছুদিন পর আমার চতুর্থ ছেলের বিয়ে হয়। এরপর থেকে আমার পুত্র-বধূ থেকে খেদমত নেওয়া শুরু করলাম। পুত্র-বধূ আমাকে গোসল করাত, আমার মাথায় তেল দিত, শীতের সময় আমার হাতে-পায়ে শীতের মেরিল সুন্দর করে মালিশ করে দিত। এমনকি আমি সবার সামনে গর্ব করে বলতাম, দেখো, আমার পুত্র-বধূ আমার শরীর কীভাবে সুন্দর করে ম্যাসেজ করে দিচ্ছে। আমার ছেলে লবণের চাষ করত বিধায় আমি আমার পুত্র-বধূকে হাসপাতালে আনা-নেওয়া করতাম। আমি তাকে হাত ধরে গাড়িতে ওঠাতাম এবং হাত ধরে নামাতাম। আমার পুত্র-বধূকে নিয়ে তার বাবার বাসায় যেতাম। এভাবে তিন বছর ছয় মাস চলে গেল। এ সময়ে কতবার আমার কামভাব সৃষ্টি হয়েছে তা আমার জানা নেই।
হযরত! আমিও একজন পূর্ণ যৌবনের অধিকারী লোক। এমন সময় হঠাৎ করে অর্থাৎ আজ থেকে দুই বছর আগে আমার তৃতীয় ছেলে যিনি কওমি মাদরাসা থেকে ফারেগ হয়েছে, তিনি ফতওয়া দিলেন যে, আমার পুত্র-বধূ তার স্বামীর অর্থাৎ আমার ছেলের জন্য চিরতরে হারাম হয়ে গেছে। এমনকি সে বলে ফেলল যে, আমার পুত্র-বধূ তার স্বামীর সাথে যা করছে, সব যিনা করছে।
একথা শুনার পর আমার তৃতীয় মেয়ে ফাতিমা অঝোরে কান্না শুরু করল। আমার ভাতিজা সুলতান অবাক হয়ে গেল। নির্বোধের মতো কতক্ষণ চুপ ছিল। তখন অর্থাৎ আজ থেকে দুই বছর আগে এ মাসআলা নিয়ে আমার ভাতিজারা কয়েকজন মিলে কয়েকজন মুফতি সাহেবের নিকট টেলিফোন করে সেই ফতওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তারাও আমার ছেলের কথার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছিলেন। এরপরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করলাম না।
হযরত! আমি একটু রাগী বিধায় আমার ছেলে যিনি আলেম তিনিও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সামনে অগ্রসর হননি। এভাবে আরো দুই বছর চলে গেল। এখন পূর্ণ পাঁচ বছর ছয় মাস অতিক্রম করলাম। অবশেষে আমার বড় ছেলে ও মেঝ ছেলে এক মহিলার সাথে আমার বিয়ে করায় নতুন সংসারে এখন দেড় মাস হল। কিন্তু আমার নতুন বিয়ের পর আমার সেই পুত্র-বধূ আমার স্ত্রীকে মেনে নিতে পারে না। পরে অবস্থা এমন হল আমার স্ত্রীও আমার পুত্র-বধূকে মেনে নিতে পারে না। আর আমিও যেন আমার পুত্র-বধূ ছাড়া বাঁচি না। অবশেষে আমার ভাতিজা এবং আমার দুই মেয়ে আমার পুত্র-বধূর সাথে কথা না বলার ওয়াদা করাল। কিন্তু একে একে কয়েকবার ওয়াদা ভঙ্গ করলাম। কারণ আমার পুত্র-বধূর সাথে কথা না বললে আমার খুব খারাপ লাগে।
হযরত! এখন আমার এবং আমার পুত্র-বধূকে নিয়ে আমার বংশের লোকগুলো শুধু সমালোচনায় করছে এবং আমাকে ভালো বলছে না। আমার পুত্র-বধূকেও ভালো বলছে না। আমার বংশের সবাই আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট। আমারও আল্লাহ তাআলার ওপর খুব ভয় এসে গেছে।
হযরত! এখন আমার করণীয় কী? কী করলে সমাজ ও পরিবারের সমালোচনা থেকে বাঁচতে পারবো? সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহর ধরা থেকে বাঁচতে পারবো। তাই আমি জানতে চাই,
(ক) আসলেই কি আমার ছেলের জন্য তার স্ত্রী চিরকালের জন্য হারাম হয়ে গেছে। যদি হারাম হয়, আমার ছেলের করণীয় কী?
(খ) যদি আমার ছেলের জন্য হারাম হয়, তাহলে কি আমি আমার পুত্র-বধূকে আমার স্ত্রী হিসেবে রেখে দিতে পারব?
প্রশ্নগুলোর দলিলসহ সঠিক উত্তর কামনা করছি।
আসাদুল্লাহ
বি-বাড়িয়া
সমাধান: আপনি প্রশ্নের বর্ণনা মতে শ্বশুর যখন আপনার পুত্র-বধূ আপনাকে পর্দাবিহীন সরাসরি শারীরিক খেদমত করার সময় অনেকবার কামভাবের কথা স্বীকার করছেন। তাই উক্ত পুত্র-বধূ আপনার পুত্রের জন্য শরীয়ত মতে চিরতরে হারাম হয়ে গেছে। উক্ত পুত্র-বধূ আপনার জন্যও চিরতরে হারাম হয়ে গেছে। তাই আপনার আলেম ছেলে যেকথা বলেছেন তা সঠিক এবং শরীয়তসম্মত। এখন আপনাদের উভয়কে অর্থাৎ ছেলে ও বাবাকে উক্ত পুত্র-বধূ থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া একান্ত জরুরি ও ফরয। নতুবা আপনারা যিনার মতো জঘন্য কবীরা গোনাহে লিপ্ত থাকার কারণে আপনাদের ওপর খোদায়ী গজব নাযেল হতে পারে। আশা করি আপনার প্রশ্নের সমাধান জানতে পেরেছেন। তারপরও ক্রমিক নাম্বার হিসেবে পৃথকভাবে উত্তর দেওয়া হল।
(ক) হ্যাঁ, হারাম হয়ে গেছে। আপনার ছেলের করণীয় হল উক্ত স্ত্রী থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া।
(খ) না, পারবেন না। আপনার জন্য উক্ত পুত্র-বধূ চিরতরে হারাম। [সূরা আন-নিসা: ২৩ বাদায়িউস সানায়ি: ৩/৪১৯, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৩০২, ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১০/৫০, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৬/৪৬২]
সমস্যা: আমি আমার স্ত্রীকে সতর্কতার জন্য বলেছি, বেগানা পুরুষের সাথে আমার ব্যাপারে সাংসারিক কোনো কথা বলবে না। যদি বল, তাহলে আগেই তোমাকে বলে দিচ্ছি যে, কথা বলার সাথে সাথেই তোমার ওপর তালাক পতিত হবে। কিন্তু সে অমান্য করে কথা বলেছে এবং কথা বলার পর আমি রাগান্বিত হয়ে প্রায় পাঁচ মাস তার সাথে কথা বলিনি, কিন্তু সে আমার বাড়িতেই অবস্থান করছে। মুহতারাম এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে উক্ত কথা মতে আমার স্ত্রীর ওপর কি তালাক পতিত হয়েছে? আর যদি হয়ে থাকে তাহলে কয়টি তালাক পতিত হয়েছে, এখন আমার করণীয় কী?
মুহাম্মদ আহসানুল্লাহ
বান্দরবন
সমাধান: আপনি আপনার স্ত্রীকে যে শর্ত সাপেক্ষে তালাক দিয়েছেন আপনার স্ত্রী সে শর্ত লঙ্ঘন করার কারণে আপনার প্রশ্নের বর্ণনা মতে তার ওপর এক রজয়ী তালাক পতিত হয়েছে। অতঃপর আপনি পাঁচ মাস পর্যন্ত স্ত্রীর সাথে কোনো সর্ম্পক না রাখার কারণে উক্ত রজয়ী তালাক বায়িন তালাকে পরিণত হয়ে গেছে এবং আপনাদের বৈবাহিক সর্ম্পক বিছিন্ন হয়ে গেছে। এখন আপনারা যদি পুনরায় বিয়ে-বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান তাহলে কমপক্ষে দুই সাক্ষীর উপস্থিতিতে সর্বনিম্ন মোহর বর্তমান বাজার দর হিসেবে ৩০০০/= (তিন হাজার) টাকা ধার্য করে স্ত্রীর সম্মতিক্রমে আকদ নেকাহের নবায়ন করতে হবে। তারপর আপনারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা ও ঘর-সংসার করতে কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে আপনি আর মাত্র দুই তালাকের মালিক থাকবেন। [সূরা আল-বাকারা: ২৩২, বাদায়িউস সানায়ী: ২/২৮৩, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৪২৮, ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া: ৫/১৪৮]
হেবা-দানপত্র
সমস্যা: আমাদের মরহুম পিতা বিগত ৪০ বছর পূর্বে তার মালিকানা জমিতে একটি পাঞ্জেগানা (ইবাদতখানা) নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে (দানপত্রের দলিলের বর্ণনা মতে ১৯৭৮ সালে) উক্ত জমিতে স্থাপিত ইবাদতখানাটির সাথে আরও কিছু জমি বর্ধিত করে ‘বায়তুস সালাত মসজিদ’ নামকরণ করে ইবাদতখানার জমি পরিচিহ্নিত (চৌহর্দ্দি দিয়ে ৯ গণ্ডা ১ কড়া ৪ দন্তি পরিমাণ জমি ফি-সাবীলিল্লাহ উল্লেখ) করে দানপত্রের দলিল করে দেন। আমাদের পিতার মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অংশের মালিক হয়ে আমাদের মাতা ২০০৩ সালে (আমাদের পিতার মসজিদের জন্য দানকৃত জমিটি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না করে) একই দাগের অন্দরে মহিলা মাদরাসার জন্য ৬ কাঠা জমির দানপত্র দলিল করে দেন।
এ অবস্থায় উক্ত ইবাদতখানায় সাধারণ মুসল্লিগণ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে আসছিলেন। পরবর্তীতে আমাদের এলাকায় একটি জামে মসজিদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে আমরা মসজিদকমিটি আমাদের পিতার দানকৃত জমিতে স্থাপিত বায়তুস সালাত মসজিদটি পরিত্যাজ্য ঘোষণা করে (আমাদের পিতার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অংশের মালিক হয়ে) মহিলা মাদরাসার জন্য আমাদের মাতার দানকৃত জমিতে নতুন করে মসজিদের ভবন নির্মাণ করি। অপরদিকে বায়তুস সালাত মসজিদ নামক পুরাতন ওই ইবাদতখানাটির অবকাঠামো ভেঙে কিছু জায়গা আমাদের কবরস্থানের জমির সঙ্গে সংযুক্ত করে নেই। আর ইবাদতখানার মূল জমিটিতে বর্তমান ইমাম সাহেব পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। উপর্যুক্ত বর্ণনার আলোকে নিম্নবর্ণিত প্রশ্নসমূহের শরয়ী সমাধান জানতে চাই,
- মসজিদের জন্য দানকৃত জমিতে মসজিদ নির্মাণ না করে মহিলা মাদরাসা নির্মাণ করা বৈধ হবে কি?
- আমাদের পিতার মসজিদের জন্য দানকৃত জমির কিছু অংশ তার অবশিষ্ট পরিত্যাজ্য সম্পত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করে বণ্টন করা যাবে কি এবং উক্ত মসজিদের প্রাপ্য অংশ কম দেওয়া জায়েয হবে কি?
- বায়তুস সালাত নামক মসজিদের জন্য দানকৃত জমিতে মসজিদ-ভবন নির্মাণ না করে একই দাগের অন্দরে মহিলা মাদরাসার জন্য দানকৃত জমিতে নবনির্মিত মসজিদের বৈধতা আছে কি?
- মহিলা মাদরাসার জন্য দানকৃত জমিতে নবনির্মিত মসজিদটির বায়তুস সালাত নামকরণ করা বৈধ হবে কি?
- মহিলা মাদরাসার জমিতে নবনির্মিত মসজিদটিতে জুমা চালু করা জায়েয হবে কি?
- মসজিদের জন্য দানকৃত জমির কোনো অংশ পারিবারিক কবরস্থানের জমিতে অন্তর্ভুক্ত করা জায়েয হবে কি?
মুহাম্মদ নোমান চৌধুরী
বায়েজিদ, চট্টগ্রাম
সমাধান: শরীয়তে যে জিনিস যে কাজের জন্য ওয়াকফ করা হয় সে জিনিস সে কাজেই ব্যবহার করতে হয়। সুতরাং যে জায়গা মসজিদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে এবং সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতসহ চালু হয়ে গেছে সেই জায়গা মসজিদ হিসেবেই বহাল রাখতে হবে। সেখানে অন্যকিছু করা জায়েয হবে না। করলে মসজিদের জায়গার পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করার কারণে মহল্লাবাসী সবাই গোনাহগার হবে। উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের উত্তর ক্রমিকানুসারে নিম্নে প্রদত্ত হলো:
- উক্ত মসজিদের জায়গাটি মসজিদ হিসেবেই বহাল রাখতে হবে। সেই জায়গায় মসজিদ ব্যতীত মহিলা মাদরাসা বা অন্যকিছু করা জায়েয হবে না। করলে মহল্লাবাসী সবাই গোনাহগার হবে।
- মসজিদের জন্য ওয়াকফককৃত জায়গার কিছু অংশ আপনার পিতার অবশিষ্ট ত্যাজ্য সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত করে বণ্টন করা এবং মসজিদের অংশ কম দেওয় জায়েয হবে না। বরং যেভাবে ওয়াকফ করা হয়েছে সেভাবেই বহাল রাখতে হবে।
- মহিলা মাদরাসার জন্য ওয়াকফকৃত জমিতে মাদরাসা নির্মাণ না করে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবে না।
- ওই জায়গায় যখন মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয নেই, তখন তার নামকরণও জায়েয হবে না।
- সেখানে যখন মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবে না, তাই জুমার নামাযও চালু করা জায়েয হবে না।
- জায়েয হবে না, বরং সেটি মসজিদ হিসেবেই বহাল রাখতে হবে। [ফাতওয়ায়ে শামী: ৬/৪৪৫ ও ৬/৫৪৯, আল-মাউসূয়াতুল ফিকহিয়া: ৪৪/১১৯, আহসানুল ফতওয়া: ৬/২৫১ ও ২৬০]
বিবিধ
সমস্যা: আমি একটি প্রাইভেট মাদরাসায় চাকুরি করি, করোনাকালীন আমরা শিক্ষকরা বাড়িতে বেকার ছিলাম। জ্ঞাতব্য যে, প্রাইভেট মাদরাসাগুলোতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ছাত্রদের মাসিক ফি থেকে দেওয়া হয়। আমাদের মুহতামিম সাহেব করোনায় মাদরাসা বন্ধ থাকাকালীন মাসগুলোর ফি ছাত্রদের থেকে উসূল করে নিয়েছেন। এখন উসূল করার পরও শিক্ষকদেরকে লকডাউনের বেতন-ভাতা দিচ্ছেন না। এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে,
- শিক্ষকরা লকডাউনের বেতন পাওয়ার অধিকার রাখেন কি না?
- ছাত্রদের থেকে ফি নেওয়ার পরও শিক্ষকদেরকে বেতন না দেওয়া শরীয়ত সম্মত কি না?
আহসান হাবীব
চট্টগ্রাম
সমাধান: যেসব প্রাইভেট মাদরাসায় ছাত্রদের থেকে মাসিক ফি নেওয়া হয় সেসব মাদরাসার শিক্ষকগণ যদি মাদরাসা বন্ধ থাকাকালীন অন্য কোন জায়গায় চাকুরির জন্য চলে না যায়, বরং উক্ত মাদরাসার জন্য অপেক্ষায় থেকে যায় এবং মুহতামিম সাহেবও তাদেরকে জবাব না দিয়ে দেয়, তখন লকডাউনের সময় অপেক্ষাকৃত মাসগুলোর বেতন তাদের প্রাপ্য হক হিসেবে গণ্য হবে। কেননা তারা আজিরে খাস (বিশেষ কর্মচারী) হিসেবে গণ্য হবে, আর আজিরে খাস তার অর্পিত কাজ না করলেও তার বেতন-ভাতার অধিকারী হয়ে যায়। বিশেষ করে যখন ছাত্রদের থেকে বেতন উসূল করে নিয়েছেন তখন মুহতামিম সাহেব উক্ত শিক্ষকদেরকে বেতন না দেওয়া তাঁর চরম অন্যায় ও জুলুম হিসেবে গণ্য হবে। [হিদায়া: ৩/৩০৮, ফাতওয়ায়ে শামী: ৬/৫৬৮]
সমস্যা: আমাদের মসজিদের ইমাম ও খতীব সাহেব নিজে জুমার বয়ান করে তার ভিডিও ধারণ করেন এবং দীনের প্রচার প্রসারের কথা বলে ইউটিউবে তা প্রচার করেন।
উল্লেখ্য যে, তিনি ইউটিউবে পটুয়াখালি টিভি নামে একটি চ্যানেল খুলেন যেখানে তার প্রতিটি বয়ানের ক্যাপশনে তিনি নিম্ন কথাগুলো লিখেন, ‘যেমন হুংকার তেমন সুর, যে শুনে সেই অবাক, ভোলা কাপালেন, না শুনলে মিস করবেন, যে সুরে গোটা দেশ পাগল, নবীকে কটূক্তি করায় চট্টগ্রামে জ্বালাময়ী বক্তব্য’ ইত্যাদি। তাঁর এসব লেখার দ্বারাই বোঝা যাচ্ছে তিনি দীনের প্রচার থেকে নিজের প্রচারই বেশি করছেন। এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, প্রথমে প্রথমে নিজের প্রচার নিজে করলে পরবর্তীতে আমার প্রচার মানুষ করবে। তিনি উদাহরণ-স্বরূপ হাফিজুর রহমানসহ বড় বড় ওয়ায়েযদের কথা বলেন এবং এও বলেন যে, হাফিজুর রহমান এক সময় পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকার বুকে দুইটি ওয়াজ করেছেন। কিন্তু এখন লক্ষ টাকা খরচ করেও একটি মাহফিলে আয়োজক কমিটি তাকে নিতে পারে না। তার কথা দ্বারা দীন প্রচার থেকে আত্মপ্রচারই বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ অবস্থায় মসজিদের ভেতর বয়ানের ভিডিও রেকর্ড করা সম্পর্কে শরীয়তের ফয়সালা কী? উল্লিখিত প্রশ্নের শরয়ী সমাধান জানানোর জন্য মুফতি মহোদয়ের নিকট বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
শফিপুর এলাকার ওলামায়ে কেরাম
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা
সমাধান: জুমার খুতবা ও বয়ান ইত্যাদি দিয়ে ইউটিউব ভিডিওয়ের মাধ্যমে আত্মপ্রচার করা এবং নিজের প্রশংসামূলক কথাগুলো সেখানে তুলে ধরা একটি শরীয়ত পরিপন্থী কাজ। সহীহ হাদীস শরীফে একজনের সামনে প্রকাশ্যভাবে তার প্রশংসা করতে নিষেধ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নিজের প্রশংসা নিজে করা ও আত্মপ্রচার করা কিভাবে জায়েজ হবে? সুতরাং উক্ত খতীব সাহেব যখন মুসল্লিদের মধ্যে বিতর্কিত হয়েছে এবং অনেক মুসল্লি তার সম্পর্কে অনাস্থা প্রকাশ করেছে তাই যদি উক্ত ইমাম সাহেব বয়ানের ভিডিও করা বন্ধ না করে তখন মসজিদের মুতাওয়াল্লী বা মসজিদ কমিটির দীনী দায়িত্ব হবে উক্ত বিতর্কিত ও অহংকারী খতীবকে অব্যহতি দিয়ে তার পরিবর্তে একজন দীনদার পরহেজগার সহীহ কুরআন পাঠকারী ইমাম নিযোক্ত করা। [সহীহ আল-বুখারী: ৬০৬০, সহীহ মুসলিম: ৭৫০৬, কিতাবুন নাওয়াযেল: ১৬/২৬০]
সমস্যা: আমার বাপ-চাচারা মোট তিন ভাই। পুরো সম্পত্তি তাদের তিন ভাইয়ের নামে রেকর্ড রয়েছে। তারা তিন ভাই যৌথভাবে তাদের বসবাসের পুরো জমিতে সেগুন গাছের বাগান করেন। পরে আমার চাচারা একবার করে গাছ বিক্রি করেন। আর আমার আব্বা আমাদের চাচাদের গাছকাটা ফাঁকা জায়গায় ‘তেশ্ছল’ গাছ রোপণ করেন। আমার চাচারা বিক্রি করার পর অবশিষ্ট গাছ নিয়ে ঝগড়া হলে, একটি ফায়সালা বৈঠক হয়। বৈঠকে আমার আব্বাকে আলাদাভাবে ২০টি সেগুন গাছ আর নিজের রোপণকৃত তেশ্ছল গাছগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। কয়েক বছর পর ওই সিদ্ধান্ত বহাল থাকাবস্থায় যৌথ জমি-জমাগুলো ভাগ বণ্টন করে সীমানা ঠিক করা হয়। যতটুকু মনে আছে, সেই সময় একটা কাগজও হয়ে ছিল। কিছুদিন পর আমরা আমার আব্বার নামে বরাদ্দকৃত তেশ্ছল গাছগুলো বিক্রি করতে চাইলে আমার চাচাতো ভাইয়েরা তাদের জমির গাছ বলে বাধা দেয়। তো তাদের এ বাধা প্রদানের বিষয়ে শরীয়ত কী বলে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুহাম্মদ শাহাদাত আলী
কক্সবাজার
সমাধান: শরীয়ত মতে এজমালী পৈতৃক সম্পত্তিতে ভাগ বণ্টন হওয়ার পূর্বে যে গাছ যে রোপণ করবে সে গাছের মালিক সেই রোপণকারীই হবে। অন্য শরীকদারগণকে তাদের অংশের ন্যায্য উজরত ও ভাড়া দিতে হবে। কিন্তু গাছ রোপণকারীরই হবে। আর যদি গাছ অন্য শরীকদারের জায়গায় পড়ে, তখন রোপণকারীকে গাছ কেটে নিয়ে যেতে হবে। নতুবা জায়গার মালিককে সেই গাছ যত দিন ওই জায়গায় রাখবে তার ন্যায্য ভাড়া দিতে হবে। এজমালী জায়গা ভাগ-বণ্টন হওয়ার পর যদি এক শরিকদার অপর শরিকদারের দখলকৃত জায়গার ওপর বা তার রোপনকৃতগাছের ওপর অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ করে,তা জুলুম ও অন্যায় হিসেবে গণ্য হবে। সামাজিকভাবে তা সমাধান করে নিতে হবে। [ফাতওয়ায়ে শামী: ৭/৪৭৩, ফাতওয়ায়ে কাযীখান: ৩/১০০, আহসানুল ফতওয়া: ৬/৪০০ ও ফাতওয়ায়ে হক্কানিয়া: ৬/৩৩৭]
সমস্যা: মুহাম্মদ ওমদা মিয়া তার স্ত্রী রশিদা খাতুনের জন্য জীবদ্দশায় ২০ শতক জায়গা ক্রয় করেন এবং তাদের ঔরসে ১ ছেলে মুহাম্মদ বাদশা মিয়া ও এক মেয়ে মুছাম্মাত শের খাতুন জন্ম গ্রহণ করে। এ দুই সন্তান রেখে ওমদা মিয়া ইন্তেকাল করেন। পরে তার স্ত্রী রশীদা খাতুন তার দেবর ওসিউর রহমানকে বিয়ে করেন এবং তাদের ঔরসে ৪ ছেলে ও ১ মেয়ে জন্ম গ্্রহণ করে। এখন জানার বিষয় হলো, ওমদা মিয়া কর্তৃক রশিদা খাতুনকে যে ২০ শতক জায়গা ক্রয় করে দেয়া হয়েছিলো তা রশিদা খাতুনের উভয় সংসারের মাঝে বন্টন হবে নাকি শুধু প্রথম সংসার তথা ওমদা মিয়ার সংসারের সন্তানদের মাঝে বন্টন হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
আবদুল মান্নান
দক্ষিণ আশিয়া,৭৯, পটিয়া
সমাধান: উল্লিখিত ঘটনায় স্বামী ওমদা মিয়া যেই ২০ শতক জমি স্ত্রী রশীদা খাতুনের নামে খরিদ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা শরীয়ত মতে স্ত্রীর জায়গা হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা ওই জমি খরিদ করার সময় টাকা পয়সার লেনদেন এবং কথার্বাতা সব স্বামী ঠিক করেছে। এবং স্বামীর জীবদ্দশায় তা স্বামীর ভোগ দখলেই ছিল। তাই কবলা পত্রে শুধু স্ত্রীর নাম বসালে শরীয়ত মতে স্ত্রী ওই জায়গার মালিক হবে না। বরং ওই জায়গা ওমদা মিয়া মারা যাওয়ার পর ওমদা মিয়ার তরকা সম্পত্তি গণ্য হয়ে ওমদা মিয়ার মৃত্যুকালে তারই জীবিত ওয়ারিশগণ তথা তার স্ত্রী রশীদা খাতুন ও ছেলে বাদশা মিয়া ও মেয়ে শের খাতুন পাবে। রশীদা খাতুনের পরবর্তী স্বামী ও তার ছেলে মেয়েরা উক্ত জায়গার ওয়ারিশ হবে না এবং ওই জমি ভোগ করা তাদের জন্য হালাল হবে না। [আদ-দুরুল মুখতার: ৭/৩১৪, ইমদাদুল ফতওয়া: ৩/৩৯, ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম: ৩/৭০০]
সমস্যা: আমাদের এলাকার পাশে একজন ডাকাতধরণের মানুষ বসবাস করত। এক সময় সে আমাদের এলাকাতে একটি খাস জমি ক্রয় করে সেখানে ঘর করে, এছাড়াও তার আরো ঘরবাড়ি ছিল। পরবর্তীতে প্রশাসনের অভিযানের মুখে সে পালিয়ে যায় এবং বর্তমানে তার কোনো খোঁজ-খবর নেই, ফিরে আসার সম্ভাবনাও কম। বর্তমানে আমাদের এলাকায় অবস্থিত তার ঘরটি এলাকার যুবক ভাইয়েরা দখলে নিয়েছে। তারা উক্ত (ঘরের) জমিটি এলাকার জামে মসজিদের জন্য দান করতে চাচ্ছে।
মুহতারাম আমার জানার বিষয় হচ্ছে, উক্ত জমি মসজিদের জন্য নেওয়া বৈধ হবে কি-না? এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হাফেজ মু. ইলিয়াছ
টেকনাফ, কক্সবাজার
সমাধান: উল্লিখিত ব্যক্তির দখলিসত্ত্ব খরিদকৃত সরকারি খাস জমিতে মসজিদ করতে হলে মসজিদের জন্য সরকার কর্তৃক লিজ তথা বন্দোবস্তি নিতে হবে। নতুবা বন্দোবস্তি নেওয়া ব্যতীত সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হলে সেটি শরয়ী মসজিদ হবে না। যদিও সে মসজিদে পাঞ্জেগানা নামায ও জুমার নামায ইত্যাদি সব সহীহ হবে এবং জামায়াতের সওয়াবও পাওয়া যাবে। কিন্তু শরয়ী মসজিদের সওয়াব পাওয়া যাবে না। [ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/৩৪৮ ও ৫/৪৪৩, রদ্দুল মুহতার: ৬/৭৫৫]