মহানবী (সা.)-এর কল্পিত ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের কারণে ফ্রান্সের সামগ্রী বয়কট ঈমানের দাবি
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিভিন্ন ভবনে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর বিতর্কিত ১২টি ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের অভিযোগে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম নেতৃবন্দ মনে করেন, মহানবী (সা.)-কে অবমাননা করে ক্ষমার অযোগ্য মহাপাপ করেছে ফরাসি সরকার। তাদের এই পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম জাতির সঙ্গে পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিংসা-বিদ্বেষের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়েছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র দেখান ইসলাম বিদ্বেষী স্যামুয়েল পাটি নামক এক শিক্ষক। তারপরই আবদুল্লাখ আনজোরভ নামের বিক্ষুদ্ধ এক চেচেন যুবক তাকে গলাকেটে হত্যা করে। পরে এই যুবককে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলে। ওই ঘটনাকে বাক স্বাধীনতার ওপর আঘাত উল্লেখ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুহাম্মদ (স.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রচার করে ফরাসি সরকার। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। চালানো হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী প্রচারণা।
এক বক্তব্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ বলেন যে, ‘ফ্রান্স কার্টুন প্রত্যাহার করবে না বরং এ ধরণের কার্টুন প্রকাশ অব্যাহত থাকবে’। ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে তিনি লালন করবেন এবং কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবেন’। এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘সোসাইটি পরিবর্তন’-এর অভিযোগ আনেন। ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং কট্টরপন্থী ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পক্ষে মন্তব্য করায় এমানুয়েল ম্যাক্রঁর ‘মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোয়ান। তিনি বলেন, একজন রাষ্ট্রনায়ককে এর চেয়ে বেশি কী বলা যায়, যিনি বিশ্বাসের স্বাধীনতার বিষয়টি বোঝেন না এবং তার দেশে বসবাসরত ভিন্ন বিশ্বাসের লাখ লাখ মানুষের সাথে এই ব্যবহার করেন? ম্যাক্রঁ নামক ব্যক্তির ইসলাম এবং মুসলিমদের নিয়ে সমস্যাটা কোথায়?
ফ্রান্সে ইসলাম ও মহানবী (স)-কে নিয়ে অবামননাকর কার্টুন ছাপানোর পক্ষে সাফাই গাওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর বিরুদ্ধে ইসলামভীতি (Islamphobia) ছড়ানোর অভিযোগ করেন। ইমরান খান বলেন, ইউরোপীয়ান নেতা ভেবেচিন্তে নিজ দেশ ও বিশ্বের মুসলিমদের উসকানি দিয়েছেন। এক টুইটে তিনি বলেন, ‘এটি এমন এক সময় যখন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ চরমপন্থা দূর ও এটিকে ছাড় দেওয়া অস্বীকার করতে পারতেন, অথচ তিনি আরও মেরুকরণ এবং প্রান্তিককরণ করলেন, যা অনিবার্যভাবে চরমপন্থার দিকে নিয়ে যায়।’ টুইটে ইমরান আরো বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, যেসব সন্ত্রাসী মুসলিম, শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদী বা নাৎসি আদর্শের হয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায়, তাদের পরিবর্তে তিনি ইসলামের ওপর হামলার মাধ্যমে ইসলাম আতঙ্ককে উৎসাহ দেওয়া বেছে নিয়েছেন।’ এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ ইউরোপসহ সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন ইমরান খান।
ওআইসি এক বিবৃতিতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অবমাননা, মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে ক্রমাগত আঘাতের নিন্দা জানায়। রাজনৈতিক স্বার্থে ফ্রান্সের নাগরিক ও ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর ঘৃণ্য চেষ্টা করছেন কতিপয় ফরাসি কর্মকর্তা। বাকস্বাধীনতার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা কখনোই গ্র্রহণযোগ্য নয়। ওআইসি ফ্রান্সকে তার বৈষম্যমূলক নীতিগুলো পর্যালোচনা করার আহ্বান জানায়।
ফ্রান্সে বর্তমানে সাড়ে ৬কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম হচ্ছে ৬০ লাখ। এর মধ্যে ১০ লাখ হচ্ছে অরিজিনাল ফরাসী বংশদ্ভূত। ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে তিন হাজার মসজিদ গড়ে উঠে। পাঁচ শতের বেশি রয়েছে শুধু প্যারিস শহরে। প্রায় দুই হাজারের অধিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও মসজিদ কেন্দ্রিক মাদরাসা রয়েছে। ফ্রান্সে ইসলাম বিকাশমান ধর্ম। প্রতিনিয়ত মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে শান্তির অন্বেষায়| টপ বিজনেসম্যনদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যাও আনুপাতিক হারে কম নয়। জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে বিশ্বাসী ফ্রান্স হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি ফ্রান্স সরকার ৬৮টি মসজিদ ও মাদরাসা বন্ধ করে দিয়েছে। আরও অসংখ্য মসজিদ-মাদরাসা বন্ধের তালিকায় আছে। ফরাসী সরকারের এই আচরণ চরম ইসলাম বিদ্বেষের পরিচয় বহন করে। ফরাসী জনগণের মাঝে ইসলামের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে এমানুয়েল ম্যাক্রঁর মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন।
সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, মানববন্ধন করে যাচ্ছে। ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে মুসলিমরা। এরই মধ্যে কুয়েত, জর্ডান, কাতার, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ ফরাসি পণ্য বয়কট করতে শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফরাসি জনপ্র্রিয় কোম্পানির তালিকা তৈরি করে সেগুলো বর্জনের ডাক দেয়া হয়। এই বর্জনের ডাকে ব্যাপক সাড়া পড়ে বিশ্বব্যাপী। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের মার্কেট ও শপিং মল থেকে ফ্রান্সের পণ্য সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। গোটা মুসলিম বিশ্বজুড়ে রয়েছে ফরাসী পারফিউম ও প্রসাধন সামগ্রীর বাজার। ফ্রান্স প্রতিবছর আলজিরিয়ায় ১৪০ কোটি এবং মরক্কোতে ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর কৃষিপণ্য রফতানি করে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও তুরস্কে ফ্রান্সের জ্বালানি প্রতিষ্ঠান টোটাল-এর পেট্রো ক্যামিক্যাল এবং পেট্রোলিয়াম পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। সৌদি আরব ও উপসাগরীয় বেশ কয়েকটি দেশে জ্বালানি অনুসন্ধান, উৎপাদন এবং পরিশোধনে টোটালের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক যদি কড়াকড়িভাবে প্রতিপালিত হয় তাহলে ফ্রান্সের অর্থনীতি নিশ্চিতভাবে ঝুঁকিতে পড়বে (নয়া দিগন্ত, ঢাকা, ২০ অক্টোবর’২০)।
কিছুদিন পরপর ফ্রান্সের সাময়িকী ‘শার্লি এবদো’-তে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে অবমাননা করে কার্টুন ছাপানোর কারণে ফরাসি মুসলমানরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। সরকার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করেছে। এর আগেও গত ২০১১ ও ২০১৫ সালে মহানবী (সা.)-কে কটাক্ষ করে কার্টুন ছেপেছিল ওই পত্রিকা। সে সময় মুসলমানরা পত্রিকাটির অফিসে অগ্নি সংযোগ করে। বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রান্স সরকার পুরোপুরি দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করছে। তারা রাসূলের অবমাননাকে বাক স্বাধীনতা হিসেবে দাবি করলেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে। ব্যঙ্গচিত্রকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলছে অপরদিকে মেয়েদের বোরকা পরিধানকে নিষিদ্ধ করেছে। এ দ্বিমুখী নীতি শান্তি, সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের পথে অন্তরায়।
আল্লাহ না করুন কোন কুলাঙ্গার যদি আল্লাহর নবী হযরত মূসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.), হযরত মরিয়ম (আ.), তাওরাত ও বাইবেলকে উপজীব্য করে বিদ্রুপাত্মক ও কটাক্ষপূর্ণ কোন চলচ্চিত্র বা ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করে ইউটিউবে ছেড়ে দেয়, তখন কী হবে অবস্থা? ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’-এর থিউরি তখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আমরা অবশ্য অবশ্য এ ঘৃণ্য প্রয়াসকে গভীর ভাষায় নিন্দা জানাবো, কুশিলবের শাস্তি দাবি করবো। ধর্মাবমাননাকে আমরা মহাপাপ বলে বিবেচনা করি।
সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সে জাতীয়তাবাদীচেতনা, সম্প্রদায়গত বিভেদ, সংকীর্ণ মনোবৃত্তি, দলীয় উগ্র দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বজনীন চিন্তার ঘাটতি, পরমতের প্রতি অশ্রদ্ধা ক্রমবর্দ্ধমানহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলো অসহিষ্ণুতার অন্যতম কারণ। অসহিষ্ণুতা একটি ব্যাধি যা ব্যক্তির অহংবোধ থেকে তৈরি হয় এবং ভালবাসার বদলে হিংসা ও ঘৃণা ছড়িয়ে সমাজদেহকে জরাগ্রস্থ করে দেয়। অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতির সাথে, হিংসা, বিদ্বেষ, জনপ্রিয়তা ও অর্থ-বিত্তের সম্পর্ক জড়িত। পরমতের প্রতি অসম্মানের এ ভয়াবহ ব্যাধি পরিবার, সমাজ, রাজনীতি, রাষ্ট্র ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলে বিকশিত হচ্ছে। উগ্রতা ও অসহিষ্ণুতার চর্চা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেলে মানুষকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বৈরিতায় বৃত্তবন্দি করে ফেলে। পৃথিবী আবাসযোগ্যতা হারায়। বিনয়, সৌজন্য ব্যবহার, মানবিক আচরণ ও ভ্রাতৃত্বের ঐতিহ্য দিয়ে এ ব্যাধিকে নির্মূল করতে হবে। শত ফুল শতদল ফুটতে দাও। পৃথিবী আবাসযোগ্য হোক।
ইসলাম তার ঊষালগ্ন থেকেই বৈরী শক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার। দীনে হকের উজ্জ্বল প্রদীপ নির্বাপিত করার বহুমুখী প্রয়াস সব সময় লক্ষণীয়। একশ্রেণির হীন, পাশবেতর ও অতি নীচু মানসিকতাসম্পন্ন লোক সব কালে সব যুগে ইসলাম, কুরআন ও হাদীসের খুঁত বের করে বিষোদগার করতে আনন্দ পায়। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর মর্যাদাবান সাহাবায়ে কেরামদের প্রতি কটাক্ষ ও বিদ্রুপাত্মক কার্টুন অংকন তাদের মজ্জাগত বৈশিষ্ঠ্য। সাম্প্রতিক সময়ে আরো দু’টি উপসর্গ যোগ হয়েছে; একটি পবিত্র কুরআনে অগ্নি সংযোগ এবং অপরটি মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক সিনেমা তৈরি। এ ঘৃণ্য অপরাধের সাথে একশ্রেণির ইহূদী ও খ্রিষ্টানরা বিজড়িত। এরা মানবতার দুশমন; মূল্যবোধবিবর্জিত বর্বর সন্ত্রাসী। অন্য কোন ধর্ম তাদের টার্গেট নয়, টার্গেট কেবল ইসলাম। এর পেছনে ৪টি কারণ স্পষ্ট। প্রথমত ইসলাম বিকাশমান ধর্ম। ইসলাম সারা পৃথিবীতে বিস্তৃতি লাভ করছে ক্রমশ; এমন কি ইউরোপ, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন জনপদ ইসলামের আলোকধারায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে; মাথা উচুঁ করে দাঁড়াচ্ছে চোখে পড়ার মত বহু দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। ইসলামের অগ্রযাত্রায় হতাশ হয়ে ওই চক্রের হোতারা বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিয়ে সাম্পদায়িকতা উস্কে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত মিথ্যা, অশালীন ও বিদ্রুপাত্মক বিষোদগারের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে অমুসলমানদের মনে ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা, যাতে তারা এ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট না হয়। ইসলামের নামে বিভ্রান্তি ও আতংক (Islamphobia) সৃষ্টি করে মু’মিনদের ইবাদত, কৃষ্টি, জীবনাচার ও দাওয়াতী কর্মপ্রয়াসে শৈথিল্য আনা। তৃতীয়ত মুসলমানগণ গভীর ঘুমে অচেতন, না জাগ্রত অতন্দ্রপ্রহরী তা পরখ করা এবং ঈমানী শক্তির প্রচণ্ডতাকে যাচাই করা। চতুর্থত প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। ইসলাম ধর্মাবমাননার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সংক্ষুদ্ধ মুসলমানগণ দেশে দেশে বিক্ষোভ ও সহিংস পন্থার যদি আশ্রয় নেয়, তা হলে তাদের দমনের নামে ন্যাটো বাহিনী হামলে পড়বে ওইসব দেশে। তারপর শুরু হয়ে যাবে জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠনের তান্ডব। ষড়ন্ত্রকারীরা কিন্তু একা নয়; এদের পেছনে আছে তাদের ¯^agx© ও সমগোত্রীয়দের এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশ্বের বহুল পরিচিত ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, ফেইসবুক ও গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিন।
ধর্ম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নিয়ে উপহাস ও কটাক্ষ করার জন্য ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ (Freedom of Expression)-এর বুলিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। আমরা মনে করি মত প্রকাশের স্বাধীনতারও সুনির্দিষ্ট শর্ত ও নীতিমালা থাকা চাই। ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’-এর নামে অন্য ধর্ম ও ধর্ম প্রচারকের প্রতি ঘৃণার আগুন ছড়ানো অব্যাহত থাকলে চলমান আন্তঃধর্ম সংলাপ (Inter faith Dialogue) প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হবে এবং অসম্ভব হয়ে উঠবে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্যোগ। হিংসা হিংসা ঢেকে আনে; বিদ্বেষ শত্রুর সংখ্যা বাড়ায়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, নিবর্তন, চক্রান্ত, উচ্ছেদ, হত্যা, ধর্ষণ, ধর্মাবমাননা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি কারণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ইসলাম ধর্মকে হেয় করার কাজে চক্রান্তকারীদের আস্কারা দেয়ার পরিণতি আগামীতে বুমেরাং হতে পারে।
চিন্তার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিবেকের স্বাধীনতা সুশীলসমাজের ও সভ্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসব স্বাধীনতা ব্যক্তির সহজাত অধিকার। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ কিন্তু অন্য ধর্ম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের প্রতি অসম্মান ও বিষোদগার নয়। পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতাদর্শ এক নয়। নিজ নিজ ধর্মের প্রচার ও যৌক্তিকতা ভিন্ন মতালম্বীদের নিকট তুলে ধরতে কোন দোষ নেই। যৌক্তিক ও বাস্তব মনে না হলে সে মতাদর্শ প্রত্যাখ্যান করার অধিকার সবার আছে। তবে অপরের লালিত বিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করার হীন প্রচেষ্টা অপরাধ আরো বিশেষভাবে বলতে গেলে তা সন্ত্রাস। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে এ ধরনের অপচেষ্টা মৌলিক মানবীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী।
গোটা পৃথিবীর ৭৫০ কোটি মানুষ বিশেষ কোন ধর্মের অনুসারী হবে, এটা অসম্ভব। নানা ধর্মের মানুষের (Religious Diversity) পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই পৃথিবীর বৈচিত্র্য। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সমাজবদ্ধ জাতিগোষ্ঠীর (Plural Society) মধ্যে সম্প্রীতি, সহিষ্ণুতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ধর্মাবমাননার সব পথ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় পৃথিবীর পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারবে না। আমরা এ ব্যাপারে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ ও জৈন ধর্মের সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। একে অপরের ধর্মানুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন বিশ্বশান্তির পূর্বশর্ত।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ফ্রান্স শতশত বছর ধরে আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তোলে। সংগ্রাম ও লড়াইয়ে মাধ্যমে বহুদেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও চুক্তির মাধ্যমে তাদের সম্পদ লুন্ঠন অব্যাহত রেখেছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের নেতাদের মধ্যে সাম্্রাজ্যবাদী মানসিকতা ও ক্রুসেডের প্রতিশোধস্পৃহার প্রাবল্য লক্ষ্যণীয়। ইসলাম বিদ্বেষ ও নবী অবমাননার পথ থেকে ফ্রান্সকে ফিরে আসতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য অব্যাহত রাখলে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় সংহতি ও বিশ্ববাণিজ্য ব্যাহত হবে। ৬০ লাখ নাগরিকের ধর্ম, কৃষ্টি ও তাদের নবীর প্রতি ক্রমাগত বিষোদগার ফ্রান্সের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবে। মহানবী (সা.)-এর অসম্মান মুসলমানরা বরদাশত করে না। ২০১৫ সালে তাঁর কার্টুন প্রকাশের পর ফরাসি ব্যঙ্গ-পত্রিকা শার্লি এবদোর ১২ জন স্টাফ এক হামলায় মারা গিয়েছিল। ইউরোপের মাটিতে ইসলাম ও মুসলমানের শিকড় গভীরে। সাথে আছে পৃথিবীর ২শ’ কোটি মুসলমান। সুতরাং ফ্রান্সের লাগাম টেনে ধরার দায়িত্ব পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষের। বিশ্বরাজনীতির বিশ্লেষকদের এটাই অভিমত।