শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ
বড় হওয়ার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, কেমন আছো? আশা করি সকলে ভালো আছো। অবশ্যই, ভালো থাকাই কাম্য।
সুহৃদ বন্ধুরা, আজ তোমাদের সাথে একটু খোলামেলা আলোচনা করতে চাই। কারণ তোমরাই আমাদের স্বপ্ন| আমাদের ভবিষ্যৎ। তোমরাই হবে আগামী দিনের সোনালী মানুষ। সমাজ ও জাতি তাকিয়ে আছে তোমাদের পানে। তোমাদের যোগ্য নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে সুন্দর-সমৃদ্ধ সমাজ। জাতি ফিরে পাবে ন্যায় ও ইনসাফ।
সুতরাং তোমাদেরকে জাতির প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। তোমাদের সামান্যতম অবহেলা সকল প্রত্যাশা নিরাশায় পরিণত করবে। সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। তোমাদের ওপরই আশার বাতিঘর নির্মিত হয়ে আছে। তোমরা যদি একটু অসতর্ক হও, সামন্য অবহেলা করো, আর গাফলাতির নিদ্রায় বিভোর থাকো, তাহলে নিমিষেই এ বাতিঘর ধ্বংস ও নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই, তোমাদেরকে আরও অনেক সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
প্রিয় তালেবে ইলম! তোমাকে বড় হতে হবে। তুমি অনেক বড় হবে, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ তোমাকে অনেক বড় করুক, এই দুআ করি। কিন্তু বড় হওয়ার পূর্বে তোমাকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে। পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
তুমি কত বড় হতে চাও?
তুমি কার মত হতে চাও?
কি তোমার লক্ষ্য? কোথায় তোমার গন্তব্য?
এসব পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করতে হবে। সে হিসেবে তোমার চলার পথ ও গতি নির্ধারিত হবে। সে অনুপাতেই তোমাকে পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে। মনে করো, তুমি দোকানে যাবে চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য। তখন তোমার পকেটে ৫০ টাকা থাকলেও যথেষ্ট। কিন্তু যখন শহরে যাবে তখন তোমাকে অন্তত শতাধিক টাকা সাথে রাখতে হবে। আর যদি ঢাকা যেতে চাও, তাহলে তোমাকে অন্তত হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
ঠিক তেমনি তুমি যদি একজন সাধারণ শিক্ষক হতে চাও, তাহলে তোমাকে যতটুকু মেহনত করতে হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি মেহনত করতে হবে, যদি তুমি একজন দক্ষ মুফতি ও বিজ্ঞ মুহাদ্দিস হতে চাও।
অনুরূপ তুমি যদি একজন দীনের দা’য়ী হয়ে প্রসিদ্ধ আলোচক হতে চাও, তাহলে তোমাকে যতটুকু মেহনত করতে হবে তার চেয়ে অধিক মেহনত করতে হবে, যদি তুমি একজন জাতির নেতৃত্বদানকারী আলেমে দীন হতে চাও। তেমনি তুমি যদি জাতীয় পর্যায়ের একজন শীর্ষ আলেম হতে চাও, তাহলে তোমাকে যত চেষ্টা-কোশেশ চালিয়ে যেতে হবে, তার চেয়ে শতগুণ বেশি চেষ্টা-কোশেশ চালিয়ে যেতে হবে, যদি তুমি আন্তর্জাতিক মানের আলেমে দীন হতে চাও।
হে প্রিয় ছাত্র! আজ তুমি পরিকল্পনা করতে পারো। আজ তুমি সংকল্পবদ্ধ হতে পারো। আমি উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম আলেম দীন শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.)-এর মত একজন সর্ব জ্ঞানের অধিকারী আলেমে দীন হবো। অতঃপর যথাসাধ্য মেহনত-কোশেশ চালিয়ে যাও। তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমাকে অবশ্যই তাঁর মত বড় আলেম দীন বানাবেন। এটি আল্লাহর নিকট কোন ব্যাপারেই না। আল্লাহার নিকট সবকিছু সহজ। আল্লাহর দয়া অসীম। মানুষ তাঁর কাছে যা চায়, আল্লাহ তাকে তা দান করেন। তাঁর সম্পর্কে মানুষ যেমন ধারণা পোষণ করে, তিনি তার সাথে তেমন আচরণ করেন। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: »يَقُوْلُ اللهُ b: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِيْ بِيْ وَأَنَا مَعَهُ حِيْنَ يَذْكُرُنِيْ، فَإِنْ ذَكَرَنِيْ فِيْ نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِيْ نَفْسِيْ، وَإِنْ ذَكَرَنِيْ فِيْ مَلَأٍ ذَكَرْتُهُ فِيْ مَلَأٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ، وَإِنْ اقْتَرَبَ إِلَيَّ شِبْرًا اقْتَرَبْتُ مِنْهُ ذِرَاعًا، وَإِنْ اقْتَرَبَ إِلَيَّ ذِرَاعًا اقْتَرَبْتُ إِلَيْهِ بَاعًا، وَإِنْ أَتَانِيْ يَمْشِيْ أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً».
‘হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দাহ আমার সম্পর্কে যেরূপ ধারণা করে, আমি তার জন্য তেমনই। সে যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গী হয়ে যাই। যে যদি আমাকে মনে মনে স্মরণ করে আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। আর সে যদি আমাকে সভা-সম্মেলনে স্মরণ করে তাহলে আমিও তাকে এর চেয়ে উত্তম মাহফিলে স্মরণ করি। সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে এলে আমি তার দিকে এক বাহু এগিয়ে যাই। সে আমার দিকে এক বাহু এগিয়ে এলে আমি তার দিকে দুই বাহু এগিয়ে যাই। সে আমার দিকে হেঁটে এলে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’’ (তিরমিযী শরীফ: ৩৫২৭)
প্রিয় বন্ধুরা, আমরা যদি নিজের জীবনকে সফল ও স্বার্থক করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে এবং ভবিষ্যৎ জীবনকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হবে। অতএব, এসো, সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবন গঠনের স্বপ্ন দেখি এবং তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন, আমীন।
প্রিয় তালিবুল ইলম, তোমাদের চলার পথটি খুব বেশি মসৃণ নয়, অনেকটা কণ্টকাকীর্ণ। এ পথে চলার ক্ষেত্রে অনেক বাঁধা-বিপত্তির সম্মুখিন হতে হয়। অনেক সমস্যায় জরজরিত হতে হয়। তোমাদের সেই সমস্যাগুলো আমাদেরকে শেয়ার করো। যথাসম্ভব আমরা তোমাদেরকে সহযোগিতা করার প্রয়াস পাব, ইনশা আল্লাহ। ভালো থেকো। সুস্থ থেকো। এই প্রত্যাশা রেখে আজকের মো বিদায় নিলাম।
সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
শিক্ষা পরামর্শ
উত্তর দিচ্ছেন: সলিমুদ্দিন মাহদি কাসেমী
প্রশ্ন: (ক) হাকিমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি তো শত-সহস্র কিতাব লিখেছেন। এতগুলো কিতাব লিখতে গিয়ে কতখানা কিতাব অধ্যয়ন করেছেন? তখন তিনি বলেছিলেন, আমি তিনজন ‘কুতুব’ (মহামনীষী)-কে অধ্যয়ন করেছি। সে তিনজন ‘কুতুব’ কারা ছিলেন? এবং তিনি তাঁদেরকে কিভাবে অধ্যয়ন করে ছিলেন?
প্রশ্ন: (খ) হাকিমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) শিক্ষার্থীরা দক্ষ আলেম হওয়ার জন্য ৩টি উপদেশ দিয়েছিলেন। যেগুলো সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, এই তিন উপদেশের ওপর কেউ আমল করার পরও যদি দক্ষ আলেম না হয়, তাহলে তার দায়-দায়িত্ব আমার ওপর। সেগুলো কি কি? জানালে উপকৃত হবো।
মুহাম্মদ সুহাইল
ছাত্র ৩য় বর্ষ, শর্টকোর্স বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া
উত্তর: (ক) মূলত বিষয়টি থানবী (রহ.)-এর বিভিন্ন কিতাবে এসেছে। এক কিতাবে তিনি বলেন, আমার নিকট হায়দরাবাদ থেকে মাওলানা আবদুল হাই (রহ.) দেখা করতে এসেছেন। তিনি সেখানকার আরবি প্রভাষক ছিলেন। একবার আমি তাকে বললাম, আমি কেবল দরসী কিতাবগুলোই পড়েছি। এগুলো ব্যতীত অন্য কোন কিতাব পড়িনি। হ্যাঁ, একান্ত প্রয়োজন হলে জরুরি বিষয়গুলো প্রয়োজনীয় কিতাব থেকে দেখে নিয়েছি। তখন তিনি আশ্চর্যান্বিত Avðh©vwš^Z হয়ে বলেন, আমি মনে করতাম আপনি হয়ত হাজার হাজার কিতাবাদি অধ্যয়ন করেছেন। অন্যথায় এতগুলো কিতাব লিখা কিভাবে সম্ভব হলো? তখন থানবী (রহ.) বলেন, এই সবগুলো আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকম-লীর বরকত! জরুরি বিষয়গুলো কানে পড়ে গিয়েছিল, যা গভীর অধ্যয়নের কাজ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাঠ্য জীবনে আমার স্মৃতিশক্তি তেমন ভালো ছিল না। তাই, অত বেশি অধ্যয়ন করতাম না। কেননা যেহেতু স্মরণ থাকতো না তাই অধ্যয়নও বেশি করতাম না। (কালিমাতুল হক: ৩৬)
অন্য কিতাবে এভাবে এসেছে যে, থানবী (রহ.) বলেন, আমি তত বেশি অধ্যয়ন প্রিয় ছিলাম না। কেননা কেবলমাত্র অধ্যয়নকেই মূল লক্ষ্য মনে করতাম না। আমলের জন্য যতটুকু ইলমের প্রয়োজন তার জন্য নিজের আকাবিরদের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা ছিল। কুরআন-সুন্নাহর যে ব্যাখ্যা তারা বলতেন তা অন্তর কবুল করতো এবং সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিত। (তুহফাতুল ওলামা, ১/৩৩৫)
আরেক কিতাবে এসেছে, এক ব্যক্তি থানবী (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি তো শত-সহস্র কিতাব লিখেছেন। কত কিতাব অধ্যয়ন করেছেন? তার উত্তরে তিনি বলেন, আমি কয়েকটি কিতাব অধ্যয়ন করেছি। তাদের নাম হলো, (১) মাওলানা হাজী এমদাদুল্লাহ মাহাজিরে মক্কী (রহ.)। (২) হযরত মাওলানা এয়াকুব নানুতবী (রহ.)। (৩) হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী (রহ.)।
এই কিতাবগুলো আমাকে অন্যান্য কিতাব থেকে বিমুখ করে দিয়েছে। যেমন- কবি বলেন,
وأنت الكتاب المبين الذي
بأحرفه يظهر المضمر
তুমিই স্পষ্ট কিতাব। যার অক্ষর দ্বারা গুপ্ত রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। (মাজালিসে হাকিমুল উম্মাত, পৃ. ১০১)
তাঁদেরকে অধ্যয়ন করার অর্থ তাঁদের সান্নিধ্যে সময় কাটানো। তাঁদের সুহবত-সংশ্রবে থেকে তাঁদের হাল-চাল, কর্মকা- এবং ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে নিজের জন্য উত্তম পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করা। থানবী (রহ.) এই তিন বুর্যগ ব্যক্তিত্বের সুহবতে ছিলেন। তাঁদের আদর্শে আদর্শবান হয়েছেন। তাঁদের দেয়া কুরআন-সুন্নার ব্যাখ্যাগুলো তিনি আত্মস্থ করেছেন। এগুলোর আলোকেই লেখা-লেখি করেছে।
উত্তর: (খ) থানবী (রহ.) বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি শুধুমাত্র চারটি বিষয়; অধ্যবসায়ের সাথে মেনে চলে তাহলে সে দক্ষ ও যোগ্য আলেম হওয়ার দায়-দায়িত্ব আমার ওপর। তার কাছে পাঠ্য বিষয় স্মরণ থাকুক বা না থাকুক। সেখান থেকে তিনটি বিষয় অতি-আবশ্যকীয়।
- দরসে যাওয়া পূর্বের সামনের সবক অধ্যয়ন করে যাওয়া।
- মনযোগ সহকারে শিক্ষকদের দরস (বুঝে-শুনে) গ্রহণ করা।
- দরসের পর পঠিত বিষয়টি নিজের যবান দিয়ে একবার তাকরার করা।
অর্থাৎ সাথীদের সাথে মৌখিক আলোচনা করা। সাথে আরেকটি বিষয় যোগ করতে পারলে ভালো হয়। সেটি হলো, পূর্বের পঠিত বিষয়গুলো নিয়মিত অধ্যয়নে রাখা। এই বিষয়টি করতে পারলে ভালো, করা জরুরি নয়।
উক্ত কাজগুলো করলে পড়াগুলো রটে রটে মুখস্থ করার প্রয়াজন হবে না, অতিরিক্ত মেহনতও করতে হবে না। (আনফাসে ঈসা, ২/৫৭২)
প্রশ্ন: (ক) যখন কিতাব পড়ি তখন স্মরণ থাকে। কিন্তু পড়ার পর উঠে গেলে ভুলে যাই। এর কারণ কী? এবং তার থেকে বাঁচার উপায় কী?
প্রশ্ন: (খ) অধয়্যন করতে বসলে পড়া-লেখায় মন বসে না। মন এদিক-সেদিক চলে যায়। এর কারণ কী? এবং তার থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী?
মানজারুল ইসলাম
ছাত্র: ৩য় বর্ষ, শর্টকোর্স বিভাগ
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া
উত্তর: (ক) পড়াগুলো বারবার পড়ুন। একবার পাঠ করার পর যখন স্মরণ হচ্ছে না, তখন কিতাব উল্টিয়ে তা আবার দেখে নিবেন। তাতে সময় বেশি নষ্ট হবে না। শুধু দেখার সময় ব্যয় হবে। কিন্তু এই ‘পুনরায় দেখা‘ স্মরণ রাখার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কাজ দেবে। বারবার পড়লে পড়া স্মরণও থাকে এবং মনেও রাখা যায়। ইমাম বোখারী (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ভুলে যাওয়ার ওষুধ কী? তখন তিনি বলেছিলেন, কিতাবের প্রতি দৃষ্টি নিবিষ্ট করে রাখা অর্থাৎ বারবার কিতাব দেখা।
سُئل البخاري: ما دواء النسيان؟ فقال مداومة النظر في الكتب. وترك المعاصي من أعظم الأسباب التي تعين على تحصيل بركة العلم. (معالم في طريق طالب العلم، ص31)
আর দ্বিতীয়ত পাপ মুক্ত জীবন গড়ার চেষ্টা করা। তাতে ইলমের বরকত অর্জন করা যায়। ইমাম শাফিয়ী (রহ.) যখন তাঁর উস্তাদ ইমাম ওয়াকী (রহ.)-কে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার অভিযোগ করলেন, তখন তিনি ঐতিহাসিক দুটি কবিতা বলেছেন,
شَكَوتُ إِلى وَكيعٍ سوءَ حِفظي
فَأَرشَدَني إِلى تَركِ المَعاصي
وَأَخبَرَني بِأَنَّ العِلمَ نورٌ
وَنورُ اللَهِ لا يُهدى لِعاصي
‘আমি (আমার শায়খ) ওয়াকীকে আমার খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম এবং তিনি আমাকে বলে ছিলেন, আমি যেন পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি বলেন, আল্লাহর ইলম হলো একটি আলো এবং আল্লাহর আলো কোন পাপচারীকে দান করা হয় না।’
উত্তর: (খ) এটি একটি মারাত্মক ব্যাধি। এটি দূর করার জন্য নিম্নোক্ত দুআটি নিয়মিত পড়বেন,
رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ، اللهم إني أعوذبك من وساوس الصدر وشتات الأمر.
‘ইয়া রব! আমি আপনার নিকট শয়তানের যাবতীয় ওয়াসওয়াসা থেকে আমি মুক্তি কামনা করছি, সে যেন আমার ধারে-কাছেও আসতে না পারে। হে আল্লাহ, আমি মনের সন্দেহ ও কাজের বিক্ষিপ্ততা থেকে মুক্তি কামনা করছি।’
অমনোযোগিতার চিকিৎসা হিসেবে ওলামায়ে কিরামগণ বলেছেন, মন বসুক আর না বসুক জোরপূর্বক কাজ করতে থাকতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে মন বসে যাবে। এ ছাড়া ইলমের গুরুত্ব ও ফযীলতের ওপর বেশি বেশি চিন্তা-ভাবনা করে এ ইলমকে নিজের কাছে অধিক আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করতে হবে। মানুষের স্বভাব হলো, ইপ্সিত বিষয়ের প্রতি এমনিতেই আগ্রহী হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর দরবারে দুয়ার প্রতি গুরুত্বারোপের পাশাপাশি আকাবিরগণের জীবন-চরিত ও ঘটনাবলি অধ্যয়ন করা অধিক উপকারী হবে।
অতএব পড়া-শোনায় মনোনিবেশ করুন। মন দিয়ে পড়ুন। এটা কখনো ভাববেন না যে, ‘মন বসা’ ইচ্ছাধীন নয়। এটা সম্পূর্ণ মানুষের ইচ্ছা ও সামর্থ্যের ভিতরের বিষয়। কেউ হিম্মত করলেই আল্লাহ তাআলা তাকে তাওফীক দান করেন।
সাথে সাথে অপ্রাসঙ্গিক চিন্তা ও ব্যস্ততা কমাতে হবে এবং ইলমের সঙ্গে সম্পর্ক ও মহাব্বত গভীর করতে হবে। তাতে ইলমের প্রতি আগ্রহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি পাবে। আর যদি ইলমের প্রতি আগ্রহ-উদ্দীপনা না থাকে, তাহলে তখন আল্লাহর কথা স্মরণ করে সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবেন। এভাবে কাজ করতে থাকলে এক সময় আল্লাহ তাআলা জীবনকে কর্মোদ্দীপনায় পূর্ণ করে দেবেন এবং উদ্দীপনাহীন সময়েও কাজ করে যাওয়ার হিম্মত দান করবেন।